Monday, December 24, 2018

শিক্ষকতায় কলঙ্কলেপন

বিবিএ পড়ার অভিজ্ঞতাটা মজার ছিলো। স্যারেরা কতো ধরনের পেইন দিতে পারে তার লিস্ট করলে একটা লম্বা তালিকা হবে। এই লিস্ট হজম করতে গিয়ে আমরা একসময় কমার্সিয়াল সেন্স ডেভেলপ করি, প্রফেশনাল হতে শিখি, resilient হয়ে যাই। এসব কারনে, কোনোদিন শিক্ষকতা করার কথা মাথায় আসেনি। ক্যারিয়ার হিসেবে কর্পোরেট জব ই ছিলো একমাত্র চিন্তা; ভাবের রাজ্য, অনেক টাকা। ৬৮০০ টাকা বেতনের শিক্ষকতার চাকরির কথা কোনোদিনই মাথার ত্রিসীমানায় আসেনি। আমার মাথায় শিক্ষকতা একটা অপশন হিসেবে আসে দ্বিতীয় মাস্টার্স করার পর; কেমন যেন একটা ফিলিংস যে শিক্ষকতা ভালো লাগে।
শিক্ষক হবার পরে বুজেছি শিক্ষকতাকে own করা লাগে, নাহলে শিক্ষক হয়ে লাভ নাই। তাই খটকা লাগে যখন দেখি 
- শিক্ষকরা ছাত্রদের নিয়ে গ্রুপিং করে ছাত্রদের ব্যবহার করে 
- প্রথম বর্ষে আসা নাজুক লাজুক ছেলেটা অস্ত্রহাতে সুপারম্যান হয়ে যায়, শিক্ষকদের কিছু করার নাই বা উনারা কিছু করেন না; কেউ কেউ করতে গেলে আবার ছাত্রদের হাতে অপদস্থ হতে হয় বা মাইর খেতে হয় 
- কিছু শিক্ষক প্রশাসনিক পদে থেকে বা উপাচার্যের ঘনিষ্ট হবার কারনে পেটের সাথে সাথে মাথাটাও মোটা করে ফেলে এবং নিজেকে সম্রাট আকবর ভাবা শুরু করেন; পুরাই আজীবস 
- কিছু শিক্ষক নিজের ছাত্র/ছাত্রী শিক্ষক হবার পরে তাকে প্রতিদন্ধী ভাবেন এবং বাজে আচরণ করেন; যে শিক্ষক নিজের ছাত্রের/ছাত্রীর শিক্ষক হওয়া সহজভাবে মেনে নিতে পারেনা তার কি নৈতিক কোনো অধিকার থাকে শিক্ষকতা পেশা চালিয়ে যাবার?
তবে লজ্জা লাগে, যখন দেখি শিক্ষকরা 
- কোনো দলের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হন এবং তা ফেসবুকে সরবে প্রচার করেন
- কোনো একটা দলের পক্ষে ফেসবুকে লাইভ ক্যাম্পেইন করেন 
- দেশের প্রধানতম ভিত্তি - মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা - নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন বা এগুলোর প্রতি সম্মান দেখান না 
- দিন/রাত একটা নির্দিষ্ট দলের আউল বাউল সব সংবাদ সকল ধরনের আউল বাউল সোর্স থেকে শেয়ার করেন; self-esteem বলে কিছু আছে বলে মনে হয় না তখন! 
- যতো বড় পদেই থাকেন না কেন, সকাল বিকাল শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার পদলেহন প্রচেষ্টা জারি রাখেন; বিভিন্নভাবে
একজন শিক্ষক রাজনীতিতে থাকবেন, কোনো দলকে সমর্থন করবেন, রাজনীতি নিয়ে কোয়ালিটি আলোচনা করবেন - এগুলোই কাম্য। কিন্তু একজন শিক্ষকের শিক্ষকতার চাকরি করা অবস্থায় একজন রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ কতোটা শোভনীয়? রাজনীতি এতো ভালো লাগলে উনারা নিজেরাই রাজনীতি করতে পারেন, সেটাকেই পেশা হিসেবে নিতে পারেন। বাধা তো নাই, তাহলে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট করার কি দরকার? বরং উনারা নিজেদের জায়গাটা ঠিক করে নিলে যারা আসলেই শিক্ষকতা পেশাকে ভালোবাসেন তারা দেশের শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
প্রশ্ন আসতে পারে আমাদের শিক্ষকেরা এতো সময় পান কি করে? অনেক কারন আছে, এরমধ্যে একটা অন্যতম কারন হচ্ছে আমাদের দেশে প্রমোশনের জন্য কোয়ালিটি পাবলিকেশন করতে হয় না। অনুষদের বা বিভাগের জার্নালে নিজের ছাত্রের করা ব্যাচেলর থিসিস ছাপিয়ে দিয়েও প্রমোশন নেয়া যাচ্ছে। আর এইসব জিনিসই প্রমোট করা হচ্ছে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাপনায়। একটা ইউজিসি আছে সেটার আবার একজন প্রধান ও আছেন যার নিজের পিএইচডি নাই। তাই উনি শিক্ষকদের প্রমোশন নীতিমালা এমনভাবে করেছেন যে ওখানে পিএইচডির কোনো মূল্য নাই। অনেকটা আমাদের ছোটবেলার পড়া the fox without a tail গল্পের মতো। উনার নাই তাই উনি উৎসাহিত করছেন যাতে বাকিরাও না করে বা করলে ঐ যে নীলক্ষেত থেকে একটা থিসিস কিনে জমা দিলেই যেন হয়ে যায়!

Thursday, July 26, 2018

একটা 'আজব কাহিনী কা গজব প্রেম' টাইপের বিকাল/সন্ধ্যা কাটানোর গল্প ...

অনেক অনেকদিন পর কিছু ফাকা সময় পেলাম। কেমন যেন ফ্রি ফ্রি লাগছিলো। ভাবলাম যে এলাকায় থাকি তা একটু চিনে আসি। একটা ইজিবাইক পেলাম, যেদিকে গেলো গেলাম, এক যায়গায় নেমেও গেলাম। কিছুক্ষন এমনি হেঁটে চারিদিক দেখলাম। চোখের চার সীমানায় অসংখ্য কন্সট্রাকশন এর কাজ হচ্ছে। আবাসিক বা বাণিজ্যিক। উন্নত প্রযুক্তির অনেক বড় বড় মেশিন ব্যবহার হচ্ছে, এগুলো এর আগে আমি দেখেছি কিনা সন্দেহ আছে। হাজারো মানুষ কাজ করছে। বাঁশ কাটা থেকে বড় বড় স্লাভ সরানো পর্যন্ত। আশেপাশে তাজা শাক সবজিও বিক্রি হচ্ছে; একেবারেই তাজা, স্থানীয় ক্ষেতের ফসল।এতো মানুষ কাজ করছে, এদের খাবার দাবারের আয়োজনটা বেশ ভালোই মিটে যায় এইসব শাক সবজিতে।

আরেকটু সামনে এগিয়ে একটা টং দোকান পেলাম চা পান বিস্কিট বিক্রি করার। কেমন যেন সেই রুবি রায়ের গানের মতো করে পুরনো দিনে পাউরুটি চা খাবার কথা মনে পড়লো। ভাবলাম ট্রাই করি। স্বাদ এখনো আগের মতোই আছে। আমরা বড় হলেও পাউরুটি চায়ের স্বাদ বড় হয় নি, এখনো তরুন। এক লোক আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে ছিলো যে মনে হলো উনি আমার এই পাউরুটি/চা খাওয়া মেনে নিতে পারছেন না। মনে হলো আমার মতো ইন করা লোকজন কে সে এই কাজ এর আগে করতে দেখেনি। অন্য সময় হলে বিব্রত হতাম, কিন্তু আজ মনে হলো, আমি তো পুরনো সময় ভ্রমণের ট্রেনে আছি, তাই কে কি ভাবলো তাতে কি আসে যায়! কিন্তু বান্দা নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত বললাম ‘ভাই কিছু বলবেন?’। একটা টু/টা শব্দও করলেন না, শুধু তাকানো থামালেন। তাকানো থামালেও ভদ্রলোক চেহারায় একটা ব্যঙ্গ ভাব রেখেই দিলেন। আমি ভাবলাম লোকটা আমার সম্পর্কে এখন কত কি খারাপ কথা ভাবছে ! পাত্তা দিলাম না, পাছে পাউরুটি/চা এর স্বাদ থেকে দুরে সরে যাই! এরপরে আবার কবে খেতে পারবো তার তো ঠিক নাই!

আবার হাঁটা দিলাম। ইজিবাইকগুলো আমাকে ‘যাবেন কিনা মামা’ জিজ্ঞেস করতে করতে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করাই বন্ধ করে দিলো। আমি সামনে যেতেই লাগলাম। কুরিল ফ্লাইওভার মোড়ের উপড় দিয়ে বিমানগুলো উপড় থেকে আরও উপড়ে উঠে যাচ্ছে দেখতে দেখতে আগালাম। ভাবলাম এবার ফিরি। ফিরার পথে দেখলাম এক চাচা ক্ষেত থেকে করল্লা, চালকুমড়া, আরেকটা যেন কি চিনিনা তুলছেন বিক্রি করবেন বলে। দুটা চালকুমড়া কিনে ফিরলাম। ফিরতে ফিরতে ভাবলাম, এইরকম তাজা জিনিস খাওয়ার মজাই আলাদা। একটা ভালোলাগা নিয়ে ফিরছিলাম, দুই কারনে। এক - মানুষজন কাজ করছে এবং ফলন ভালো, দুই - দেশীয় একজন উৎপাদনকারীর কাছে থেকে কিনেছি বলে। আর নাহলে তো পিয়াজও ভারতেরটাই খেতে হয়!

বাসায় আসার পরেই পুলিশের কল। পাসপোর্ট এর ভেরিফিকেশন। ভয় পেলাম যে কোন ঝামেলায় যেন পড়তে যাচ্ছি। উনার সাথে দেখা করতে যেতে হবে কিছু কাগজপত্র নিয়ে। গেলাম। অনেক কিছুই ভেবেছিলাম - নেগেটিভ সবকিছু। কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা। উনি কাগজপত্র দেখে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দিলেন। আমাকে কফি খাওয়াতে পারেন নাই বলে দুঃখ করলেন [কফির দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো]। আমি অবাক হলাম যে পুলিশ বন্ধুর মতো আচরণ করছে। ভালো লাগলো যে উনাদের মতো ইয়ং ছেলেরা হয়তো কোনো পরিবর্তনের আশা নিয়ে কাজ করছেন। শুভকামনা উনাদের জন্য।

ক্ষুধা লেগে গেলো। ভাবলাম কিছু খাঁই। টোকিও স্কয়ার এর খাবারের দোকানের ভাবসাব দেখে বিরক্ত লাগলো। বেরিয়ে গেলাম। ভাবলাম একটু ঢাকার রাস্তায় হাটি। আজকের দিনটাই অন্যরকম। হাটতে হাটতে এক জায়গায় দেখলাম অনেক মানুষ চটপটি খাচ্ছে। আবারো সেই রুবি রায়, অর্ডার দিয়েই দিলাম। চটপটি খাওয়ার পরে ভাবলাম ফুসকা তো আর কোনো দোষ করেনি। খেলাম ফুসকাও। বেশি বেশী ঝাল দিয়ে; স্বাদই অন্যরকম। আমি জানি হয়তো বলবেন এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত না। ফুসকা বানানোর যেসব ভিডিও দেখেছি তাতে আর খাবারই কথা না। কিন্তু খেলাম এবং এই স্বাদ আর কোথাও পাওয়া যাবেনা বলেই আমার ধারনা।

ফুসকা খেতে যাবার সময় এক চাচাকে দেখলাম আমড়া বিক্রি করতে। এই জিনিস তো পরখ না করলেই নয়। কিন্তু চাচার দোকানে যাবার পথে চোখ গেলো চানাচুর এর দোকানে। মুড়ি চানাচুরের মিশ্রণ ছোটবেলায় কতবার খেয়েছি তা গুনেও শেষ করা যাবেনা। বিশেষ করে লঞ্চে করে যখন ঢাকা আসতাম, ভোরবেলায় মুন্সিগঞ্জ থেকে অনেক হকার উঠতেন এগুলো নিয়ে। আমি তো মনে হয় মুন্সিগঞ্জের জন্য অপেক্ষা করতাম এই মুড়ি/চানাচুর বা নারিকেল মুড়ি খাবার জন্য। সেই স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। বড় হয়ে কোনোদিন আর সেই স্বাদ পেয়েছি বলে মনে হয় না। ভাবলাম চানাচুর খেয়েই যাই। মামা বানিয়ে দিলো, স্পেশাল বোম্বাই মরিচ দিয়ে। ঝালে পুরো মুখ পুড়ে গেলো, তবে অন্যরকম স্বাদ ছিলো। নাহ, ছোটবেলার সেই স্বাদ পাইনি, তবে ভালো লেগেছে। পরের গন্তব্য আমড়ার দোকান। আমড়ার স্বাদও বদলায়নি। এখনো একই আছে। চিরতরুন।

মরিচের অত্যাচার তখন চরমে। পানির দোকানও পাচ্ছিলাম আবার মামাদের কাছে রাখা পানিতেও মন সায় দিচ্ছিলোনা। কি আর করা, এক মামা ডাব ডাব করে চিৎকার করছিলেন। ডাব খেলাম। মামা বললেন হালকা নরম নারিকেল হবে। কিন্তু বেশ শক্ত নারিকেল হলো এবং তার এক টুকরা নিয়েই গন্তব্যের বাসে উঠে বসলাম। বাসায় পৌঁছলাম রাত ১২ টার পরে।

এক বিকাল/রাতে ঢাকার রাস্তায় যা যা পাওয়া যায় তার এক অংশ খাওয়া শেষ করলাম। দেশে থাকতে খেতাম না এসব, খেলেও খেতাম ভালো কোনো জায়গায়। কিন্তু অনেকদিন দেশে না থাকলে যা হয়, এগুলো চোখের সামনে অমৃত হয়ে ঘোরাপেরা করে। রাস্তার পাশের টং দোকানেরগুলোই বেশি জ্বালায়। তাই নিজেকে একটু ঝালিয়ে নিলাম!

Wednesday, July 18, 2018

সাহসহীন সুশীলস!

এই ধরুন, দিন দিন আমাদের জ্ঞান বাড়ছে, আমরা অনেক কিছুই শিখি। জানার আর বোঝার কোনো শেষ নাই, তাই শিখে যাই। এই যেমন চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন এর ঘটনাবলী দেখে একটা উপলব্ধি হয়েছে অধ্যাপক জাফর ইকবাল কেন মুক্তিযুদ্ধ করেন নি বা যুদ্ধাপরাধের মামাল্য স্বাক্ষ্য দিতে আসেন নি। আমি ভুল ও হতে পারি। আমার ধারনা হলোঃ

মুক্তিযুদ্ধ বা এর মতো বড় কিছুতে নিজেকে জড়াতে হলে সাহস লাগে। ইকবাল সাহেবের এবং সাহেবদের সেটা নাই মনে হয়। উনি কোটা নিয়ে পক্ষে লেখার পরে সংসদ থেকে আসা বানীতে এমন ঘাবড়িয়ে গেছেন যে উনি এরপরে যা করলেন তা তো ইতিহাস। নতুন এক জাফর ইকবাল কে দেখলো জাতি। বলা যায়, জাফর ইকবাল কে বমি করতে দেখলো পুরো জাতি। এখনো বমি ই চলমান। এই যে এতো ছেলেমেয়ে মার খাচ্ছে, এতো শিক্ষক লাঞ্চিত হচ্ছে, উনার বমি চলমান আছে। কোনো টু টা নাই। আরে ভাই, একজন শিক্ষক যিনি কিনা শিক্ষকের চেয়ে লেখক হিসেবে বেশি পরিচিত উনি শিক্ষাখাতের এমন গোলোযোগ নিয়ে চুপ মেরে বসে আছেন! কিছুই লিখছেন না - কি করে সম্ভব তা? কিন্তু সমন্নিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বা ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকরা কেন টাকা নেন তা নিয়ে উনি বেশ সরব। হায়রে মিডিয়া প্রেম!

কিন্তু কিছু বাচ্ছা পোলাপাইন তাদের কথা বলার অধিকার আছে এবং সেটা প্রমান করার জন্য অনেক নির্যাতনের মাঝেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে সরব আছেন। আমি তাদের দাবির পক্ষে বিপক্ষে যাবোনা, তবে আমি তাদের উপড় চলা নির্যাতন কে অত্যন্ত অন্যায় মনে করি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিরা প্রজাদের টাকায় চলে তাদের উপড় এমন নির্যাতন করলে প্রজাতন্ত্র দরকার কোথায়? নাকি এরাও ১৫/৩৮ এর ট্রেনিং নিয়ে এসেছে?

যাই হোক, দিনশেষে রাস্তায় মার খাওয়া ছেলে/মেয়েটির জন্য শ্রদ্ধার পারদ যত উপড়ে উঠছে, অধ্যাপক ইকবাল বা এই গোত্রীয়দের জন্য ঠিক ততোটাই কমছে।

সুশীলপনা


একবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বেশ আলোড়ন তুলেছিলো। সংবাদচিত্রে দেখা গেছে - শিবিরের মিছিলে লাঠি/অস্ত্র হাতে লিড দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। আমরা তখন মজা করছিলাম বিভিন্ন জোকস এর মাধ্যমে - - অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ব্যবহার তো ভুলিনি ইত্যাদি ইত্যাদি।

অবস্থাদৃষ্ঠে এখন মনে হচ্ছে জোকস করার সময় শেষ এসব নিয়ে। এখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রদলের সাথে বিএনপির শিক্ষকরা নামতে পারবেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রলীগের সাথে আওয়ামী শিক্ষকরা নামতে পারবেন, জামাত যেহেতু দুই দলেরই ভাসুর তাই তারা সব আমলেই নামতে পারবেন এই মর্মে নিয়ম করা হোক।

লাভ কি? বিশাল লাভ দাদা। এতে করে আর কোনো নাচতে নেমে ঘোমটা দেয়া নর্তক/নর্তকীর নাচ দেখতে হবে না। মানুষ সহজে বুঝতে পারবে কে সাদা আর কে কালা। আরও একটা বড় সুবিধা হলো, কিছু ভদ্রলোকের মনোকষ্ট - - ইস যৌবনকাল নাই তাইলে দেখাইয়া দিতাম, বা শিক্ষক না হলে দেখাইয়া দিতাম, বা বুকটা ফাইটা যায় কিন্তু মুখে আনতে পারছিনা - - দুর হবে এবং ঐসব আগাছা জাতীয় জিনিসপত্র আমাদের দেখতে বা শুনতে হবে না।

Saturday, May 19, 2018

মানুষের মনুষ্যত্ব

মানুষ বড় হবার পড় যদি নিজেকে ছোট করতে না পারে, তাহলে সে কি মানুষ থাকে?

- - অনেক বড় হবার পড় যদি ছোটদের ছোট বলতে আপনার বিবেকে না লাগে তাহলে বুঝতে হবে আপনি বড় হয়েছেন এবং অমানুষ হয়েছেন। মানুষ হতে পারেন নি।

- - আপনি খুব ভালো একটা প্রতিষ্টানে চাকরি করেন বলে বাকিদের কিছু মনেই করেন না, আপনি তাহলে মানুষ হতে পারেন নি। মনে রাখা উচিৎ, যিনি ছোট কাজ করেন তিনিও সম্মান পাবার যোগ্য; এখন আপনি তা দিবেন কিনা সেটা আপনার ব্যপার।

- - আপনি ভালো রিসার্চ করেন বিধায় অন্য যারা রিসার্চে আপনার মতো দক্ষ না, তাদেরকে আপনার তেলাপোকা মনে হয়, আপনি মানুষ হতে পারেন নি। এই যে ভাবছেন, আপনি ভালো গবেষক, কুলীন সম্প্রদায়ের লোক, এটার একদিন সমাপ্তি তো হবেই, তাইনা? তবে সেদিন আর মানুষ হতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে !

- - আপনি নিজের স্বার্থটা ভালোই বুঝেন, স্বার্থ উদ্ধার করে নেন কোনোরকম ধন্যবাদ দেয়া বাদেই, কিন্তু অন্যের স্বার্থের ব্যাপারে মারাত্মক উদাসীন থাকেন, আপনার মধ্যে মানুষ হবার তেমন লক্ষন নাই।

- - অন্যদের গ্যারান্টেড ভাবেন, তাই দরকার হলে খোঁজ নেন, কিন্তু অন্যের দরকারে রবীন্দ্রনাথের বইয়ের ভাষায় কথা বলেন, আপনি এখনো মানুষ হন নি।

- - আপনি মানুষকে সাহায্য করতে আসেন এটা বুঝানোর জন্য যে আপনি অনেক বড় হয়েছেন, আপনি হয়তো টের পান না যে আপনার কথায় একধরনের অনুকম্পা থাকে। আপনি এখনো মানুষ হন নি।

- - অন্যে যখন আপনাকে অসম্মান করে আপনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন, কিন্তু আপনি যখন অন্যকে একইধরনের অসম্মান করেন তখন আপনি কিছু মনে করেন না; আপনার মনুষ্যত্ব মরে গেছে অথবা ছিলোনা কোনোদিন

- - মানুষকে মানুষ না ভেবে আপনার চেলা বানাতে ইচ্ছে হয় এবং তাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, আপনি কোনোদিন মানুষ হবেন কিনা আমার সন্দেহ আছে

জগতের সকল মানুষের চেহারার প্রাণীগুলো (আমিসহ) মানুষ হোক, আমিন !

Friday, April 13, 2018

জাহাঙ্গীনগরে পদায়ন - বিভিন্নজনের বিভিন্ন পদে, একজনের ভিন্ন ভিন্ন পদে


আমরা যারা জাহাঙ্গীরনগরে পড়েছি তাদের জন্য জাহাঙ্গীরনগরটা ‘স্বাদের লাউ বানালো মোরে বৈরাগী’ টাইপের একধরনের ভালোবাসা। অনেক দুরে বসবাস করে অনেক ভুলে থাকতে চাইলেও জীবনের কোনো না কোনো অলিগলিতে জাহাঙ্গীরনগর এসেই যায়। তাই এটা নিয়ে প্রায়ঃশই লেখালেখি হয়ে যায়। এই যেমন আজ লেখার ইচ্ছেটা এলো জাহাঙ্গীরনগরের রেজিস্ট্রারের ইমেইল দেখে। উনি কয়েকটা ইমেইল করেছেন বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন বা একই ব্যক্তির বিভিন্ন পদে পদায়ন সম্পর্কে। সবাইকে অভিনন্দন; যারা বিদায়ী তাদেরকেও অভিনন্দন। প্রিয় স্যারদের বিদায়ে কেউ বিষণ্ণ আবার কেউবা প্রিয় শিক্ষকের আগমনী সংবাদ নিয়ে ফেসবুকে সরব।

আমার অবশ্য অন্য জায়গায় চোখ পড়লো। আমি যখন জাবিতে আসি তখন বায়েস স্যার ভিসি ছিলেন সম্ভবত। তো ঐ বয়সে এইসব পদায়ন আমার পরিধির বাইরে ছিলো। এরপরে অনেক কাল জাবির বাইরে থাকায় এইসব পদায়ন চোখে পড়তো না। চাকরি করতে আসার পরে এইসব পদায়ন চোখে পড়াতে না চাইলেও বিভিন্নভাবে তা চোখে পড়েই যেতো। বা যারা এইসব পদায়নের হর্তাকর্তা তিনারা এইসব পদায়নের সংবাদ দৃষ্টিগোচর করেই ছাড়তেন।

যেমনটা বলছিলাম বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন পদে বা একই ব্যক্তির বিভিন্ন পদে পদায়ন হচ্ছে। এটা এখনই শুধু হচ্ছে তা নয়, বরং আগেও এমনটাই হতো। আমার জানা সময়ের মধ্যে, এটা মোটামুটি মুস্তাহিদ স্যারের আমল থেকেই হচ্ছে। তো এটাই ট্রেন্ড। কিন্তু এই ট্রেন্ড এর মধ্যে ‘মুরগির দেশে শিয়াল রাজার’ মতো আরেকটা ছোট ট্রেন্ড বিদ্যমান যা অনেকের চোখে পড়ে আবার অনেকের চোখে পড়েনা। এই ট্রেন্ডটা হলো, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সব আমলেই পদায়িত হওয়া।  

এই ব্যক্তিরা সব আমলে ক্ষমতাবান থাকেন, ক্ষমতার মধ্যে থাকেন, এবং ক্ষমতা নিয়ে খেলেন। আওয়ামীলীগ বিএনপি এই দু আমলে তো কোনো কথাই নাই,  জামাতমনা লোকজনও ইনাদের পছন্দ করেন এবং ক্ষমতায় বসান। আমি দ্বিধায় থাকি এই ভেবে যে, ইনাদের ক্যারিশমা অনেক ডাইনামিক নাকি যারা ক্ষমতায় বসেন তারা অত্যন্ত ভুলোমনের। আমি একই ব্যক্তিবর্গকে মুস্তাহিদ স্যার, শরীফ স্যার, আনোয়ার স্যার, এবং বর্তমান উপাচার্যের আমলে একইরকম ক্ষমতাবান থাকতে দেখছি। এটা কি করে সম্ভব? এই ধরনের ব্যক্তিদের যারা এরকম ক্ষমতায় বসান, তারা বিভিন্নসময় এদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছেন। কিন্তু এরপরেও পরববর্তী উপাচার্য এসে তাদেরকেই আবার ক্ষমতায় বসান। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি, এখানে কি তাহলে যোগ্যতার চেয়ে অযোগ্যতা বেশি? যা ই বেশি থাকুক না কেন, এই ট্রেন্ডটা এখন পর্যন্ত জাবির জন্য ভালো বলে প্রমানিত হয়নি।

এরই সাথে আরেকটা ট্রেন্ড হলো, একই ব্যক্তির বিভিন্ন পদে পদায়িত হওয়া। দুঃখের ব্যাপার হলো এই মাল্টিপল পদায়ন নিয়ে যারা আগে সরব ছিলেন তারাই এখন সেই কাজটি করছেন। আমি আবারো বিভ্রান্ত। বিভ্রান্তির মূল কারণগুলোর একটা হলো, এইসব পদগুলোর বেশিরভাগই সিলেকশন, ইলেকশন না। এই মাল্টিপল পদায়ন অতীতে অনেক সমস্যার তৈরি করলেও আমরা সেখান থেকে তেমন বেশি কিছু নিতে চাইনি বোধকরি।

তারপরেও জাবি ভালো থাকুক, ভালো থাকুন এর সকল স্টেকহোল্ডাররা।  

Friday, March 16, 2018

পর্ব দুইঃ অধ্যাপক জাফর ইকবালঃ আমার মুরীদীয় অভিজ্ঞতা


আমার নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে অধ্যাপক জাফর ইকবাল এর মুরীদদের সাথে। ইনারা বেশ শিক্ষিত মুরীদ ই। একজন ছিলেন আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েরই সিনিয়র। আমি অধ্যাপক ইকবাল এর একটা কলাম নিয়ে কথা বলছিলাম যে এই কলামটা কিভাবে দেশের হাজারো শিক্ষককে অপমান করে। আমার সিনিয়র সেখানে এসে হাজারো ঝাঝালো যুক্তি দেখালেন প্রায় ১৫-২০ টা কমেন্ট করে। আমি উনাকে বার বার ই বলছিলাম যে আপনি কলামটা পড়েন। অত্যন্ত সুখের বিষয় হলো যে উনি ১৫-২০টা কমেন্ট (যেগুলোতে আমাকে যা তা ভাষায় আক্রমন করেছেন) করার পড়ে কলামটা দয়া করে পড়েছেন। পড়ার পরে আমাকে বললেন যে আমার কথায় যুক্তি আছে। এবং এর পরে উনি আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিলেন। এই ভদ্রলোক অনেক বড় পদে অনেক বড় এক প্রতিষ্টানে চাকরি করেন। ইনার এটিটিউড দেখুনঃ ইনি কলামটা ভালো করে পড়েন ই নি, কিন্তু পীরবাবা লিখেছেন তাই এক বাক্যে গিলেছেন। নিজের গাড়ের উপড় যে একটা মাথা আছে সেটা ভুলে গেছেন এবং  সমালোচনাকারীদের উপড় বরং হামলে পড়েছেন। অনেক সময় নেয়ার পরে যদিও বুঝেছেন পীরবাবা এইবার পুরো সঠিক বলেন নি, উনি সেটা হজম করতে পারেন নি। এদের কাছে অন্যের মান সম্মান কোনো ব্যাপারই না !

এইরকম আরো অনেক মুরীদ দেখার সৌভাগ্য (?!) হয়েছে আমার। এক মুরীদকে দেখলাম অধ্যাপক ইকবাল কে নিয়ে সে কট্টরদের চেয়েও বড় কট্টর। ইনি শাবির ভিসিকে বিচি পর্যন্ত বলতে ছাড়েন নি; কারন সেই অধ্যাপক জাফর ইকবাল; অধ্যাপক ইকবালের সাথে ভিসির কি ঝামেলা হয়েছিলো যেনো তখন। ইনারা কিন্তু ভয়াবহ শিক্ষিত লোকজন। ইনাদের শিক্ষা নিয়ে কথা বলা বোকামি হবে। কিন্তু উনাদের মানসিক বিবর্তন নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। ইনারা গনতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন, প্রগতি নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু গনতন্ত্র বলতে বুঝেন যে শুধু উনারাই কথা বলবেন বা উনাদের কোনো সমালচনা করা যাবেনাসহ একনায়কতন্ত্রের সকল নিয়মাবলী। ইনারা ভুলে যান যে জাফর ইকবাল আজকের জাফর ইকবাল হতে পেরেছেন শুধুমাত্র অন্যের সমালোচনার মধ্য দিয়ে গেছেন বলেই। একটা পেপার পাবলিশ করতেও একজন অথরকে অপরিচিত রিভিউয়ারের কঠিন রিভিউ পার করে কোয়ালিটি নিশ্চিত করেই তা করতে হয়। কেউ যদি মনে করে যে আমি বেস্ট পেপার লিখেছি, আমাকে সমালোচনা বা রিভিউ করার কিছু নাই, তাকে দিয়ে কোনোদিনই তেমন ভালো কিছু হবেনা। তাই অধ্যাপক ইকবালের ফ্যানদের উনার সমালোচনা নিতে না পারার কারনটা আমি ঠিক বুঝে উঠিনা। এখানে বলে রাখি, অধ্যাপক ইকবাল নাস্তিক না আস্তিক এই ধরনের আলোচনাকে আমি সমালোচনা মনে করিনা। আমি মনে করি এটা কারো আলোচনার টপিকই হওয়া উচিৎ না। এটা পুরোই অধ্যাপকের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

আরেক কিসিমের মুরীদ দেখলাম যারা দেশে এতো খুন খারাবি হবার সময় টের পায়নি, কিন্তু মুখচেনা কিছু লোক এই যেমন অধ্যাপক ইকবাল এর ঘটনার পরে বিশাল ইংরেজী স্ট্যাটাস দিয়ে পুরো দুনিয়াকে জানানোর আপ্রান চেষ্টা করছেন যে বাংলাদেশ কিন্তু মৌলবাদীতে ভরে গেছে। ওহ আচ্ছা, উনাদের এতো ইনোসেন্ট ভাববেন না যে উনারা হয়তো বাংলায় লিখতে পারেন না। বাকিসব স্ট্যাটাস কিন্তু উনারা বাংলায়ই দেন। দরকার হলে হিন্দীটাও  বাংলায়ই লিখেন ইনারা। এদের সাথে জামাতীদের পার্থক্য কোথায়? জামাতীরা বাংলাদেশ নিয়ে যতসব খারাপ খবর আছে তা ইংরেজীতে দেয় এবং সবাইকে অনুরোধ করে শেয়ার করে বিদেশিদের দেখাতে। মজার ব্যাপার হলো উনারা দেশের ভালো নিউজগুলো কিন্তু বাংলায় দেয়! এতে বুঝা যায় এদের target audience কে বা কারা। ব্রিটিশরা আমাদের গোলামি শিখিয়ে নিজেরা সেটা ভুলে গেলেও আমরা এখনো গোলামিই করি; অন্তত ঐ ধরনের মানসিকতা লালন পালন করি। যেই দেশটা এতো কিছু দেয় তার পিছেই লেগে থাকি !!

আমাদের দেশে বেশ কয়েক ধরনের কট্টরবাদী আছেন। ধর্মীয় -  মুসলিম হিন্দু উভয়ই; রাজনৈতিক - বাচি/মরি, হয় আওয়ামীলীগ নাহয় বিএনপি; বিএনপি করি - শেখ মুজিব অবশ্যই খারাপ মানুষ ছিলেন; আওয়ামীলীগ করি - জিয়ার কোনো অবদানই নাই এই দেশে। আমার অভিজ্ঞতা বলে এইসব কট্টরবাদীরা আসলে কারো না, এরা শুধু নিজের স্বার্থে কাজ করে। এরা আজ একে ফাসায় তো কাল আরেকজনকে ফাসিয়ে দেয়। এদের একেকজন তেলের বা ঘৃনার খনি নিয়ে চলাফেরা করে; হয় তেলবাজি করে না হয় ঘৃনা ছড়িয়ে দেয়। কট্টরবাদীদের এই চেহারা শুধু আমাদের দেশেই না, বরং দুনিয়ার সবদেশেই এই রকম। তো এই যখন প্রেক্ষাপট, আরেক কট্টর গ্রুপ যোগ হলো অধ্যাপক ইকবালের মতো গুনীজনকে ঘিরে। আমার বিবেচনায় এই কট্টরবাদ না দেশের জন্য না অধ্যাপক ইকবালের জন্য শুভকর।

সংস্কৃতির দেউলিয়াপনা


আমার মনে হয় কি আমাদের বাংলা সিনেমা বা নাটকগুলোতে অনেক পরিবর্তন আনা দরকার। নাহলে বাঙ্গালী জাতির কপালে দুঃখ আছে। বাঙ্গালী যদিও মুখে বলে যে বাংলা সিনেমা দেখিনা কিন্তু আচার আচরন পুরোই বাংলা সিনেমার মতো। বুঝিনা কেমনে কি? উদাহরন দিমু?

ধরুন এক নায়িকা আর দুই নায়কের ছবিতে কি হয়? হয় সাইড হিরোকে কোনো কলংক দিবে অথবা তাকে মেরে ফেলবে সিনেমাতে। মেইন হিরোকে ওয়ান এন্ড ওয়ানলি করাই লাগবে। কোনোভাবেই সহাবস্থান দেখানো যাবেনা। কোনোদিনই এইরকম করা হয়না যে, সাইড হিরোও থাকলো, তারও অনেক যোগ্যতা আছে, কিন্তু নায়িকার কোনো কারনে সাইড হিরোকে ভালো নাই লাগতে পারে। কারন আমাদের দর্শক এটা মেনে নিতে পারেনা। তারা সবসময় একমুখী চিন্তা করে; নাকি এইসব দেখে দেখে একমুখী হয়ে গেছে?

একই সংস্কৃতি আছে আমাদের আচরনে। এই যেমন দুটো ঘটনা একসাথে ঘটলো - বস্তির আগুন আর নেপালে বিমান দুর্ঘটনা। নেপালের ঘটনায় মানুষ এতো বেশি আহত যে বেশিরভাগ মানুষ সেটা নিয়েই কথা বলছে। এর মানে এই না যে বস্তি পুড়ে যাওয়াতে তারা আনন্দ পেয়েছে। কিন্তু যারা বস্তির আগুন নিয়ে কথা বলছেন, তারা নেপালের ঘটনাকে খোচা দিয়েই শুরু করছেন। আরে ভাই, বাংলা সিনেমার মতো কেন করছেন? বস্তির আগুন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নেপালের ঘটনার দিকে বা ঐ ঘটনায় মানুষের অনুভুতির দিকে আঙ্গুল তুলতে হবে কেন? আপনি ভালো মানুষ, দুটো দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে আপনি সচেতন, তাই আপনি বাকিদের ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন ব্যাপারটা। এটা অত্যন্ত ভালো। কিন্তু আপনার বাংলা সিনেমা ধরনের আচরন আপনাকে নিয়ে কনফিউজড করে দেয় - ভালো মানুষ না ভালো মানুষের অভিনয়?

Friday, March 9, 2018

অধ্যাপক জাফর ইকবাল এবং আমার ফেসবুক কানেকশনস

একটা পোষ্ট দিলাম, লোকজন কনফিউজড হয়ে আমাকেই কনফিউজড করে দিছে। তাই ভাবলাম এবার একটা কনফিউজিং পোষ্টই দেই। প্রসঙ্গ সমসাময়িকঃ অধ্যাপক জাফর ইকবাল। কয়েক পর্বে লিখবো। আমার ফিলিংস, আমার বোঝাপড়া। ভুল থাকতে পারে, গঠনমূলক আলোচনা স্বাগতম। এটিটিউড থাকলে দুরে থাকুন। আর মুরীদ হলে এই পাড়া মারাবেন না প্লীজ।

প্রথম পর্বঃ ফেসবুক কানেকশনশ
আমার ফেসবুকের কানেকশন এর সংখ্যা অল্প অল্প করে অনেকদুর চলে এসেছে। নিজের দেখেই বিরক্ত লাগে। তাই গত এক মাসে নতুন কারো ‘বন্ধু!’ হচ্ছিনা নিতান্ত পরিচিত না হলে। ভাবছি যারা অলরেডি ‘বন্ধু!’ তাদের আগে চিনে নেই। এই উদ্দেশ্য নিয়েই দেখলাম অধ্যাপক ইকবাল নিয়ে আমার ‘বন্ধুদের!’ কি ধরনের প্রতিক্রিয়া। প্রতিক্রিয়ার উপড় ভিত্তি করে আমার ‘বন্ধুদের’ এই কয়ভাগে ভাগ করা যায়।

জাফর বিরোধীঃ বাপরে, এরা সিক মানে অসুস্থ্য। এরা ফেসবুকের এখানে সেখানে গিয়ে নোংরামি করে। এদের কর্মকান্ড দেখে মনে হয় এদের অনেকেই অর্ধ বা অশিক্ষিত। শিক্ষিত লোকের সংখ্যাও কম না। তবে চেনা দায় মুখোশের কারনে। এদের কমেন্ট দেখলে মনে হবেনা বাংলাদেশে আছি। অথবা এই বাংলাদেশকে চিনিনা। এরা অসম্ভব টাইপের বর্বরতা দেখায়। এরা এদের ধর্মের সামান্য জ্ঞান বা অজ্ঞানতা নিয়ে একেকজনকে এখানে সেখানে নাস্তিক ঘোষনা করে। ব্যাপারটা উনারা উনাদের পেশার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো উনারা নাস্তিকতার জন্য মানুষের শাস্তি নির্ধারন করে। ধর্ম উনাদের সবচেয়ে প্রিয় হাতিয়ার যদিও এটা সম্পর্কে এদের আদৌ বাস্তবসম্মত জ্ঞান নাই। যেই ধর্মের প্রতিষ্টাতা নিজের পরিবারের লোকজনদের আজীবন অনুরোধ করে গেছেন ধর্ম মানার জন্য কিন্তু মানাতে পারেনি এবং মানাতে না পেরে কোনো ক্ষতিও করেন নি, সেই প্রতিষ্টাতার তথাকথিত অনুসারিরা তার নাম নিয়ে অন্যের মাথায় আঘাত করে।

জাফর ফ্যান না কিন্তু প্রগতিশীলঃ একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন উনারা। ‘একটা প্রতিক্রিয়া না জানালে কেমন দেখায়, তাই প্রতিবাদ করে গেলাম’ ধরনের। এতো বেশি আগ্রহ যদিও নাই।  

মিডিয়া পাগলঃ কিছুই জানেনা কিন্তু বিশাল একটা হৈ চৈ ফেলে দেয় এই ব্যাপার নিয়ে। ঘটনা বা ঘটনার মূল কিন্তু কিছুই বুঝেনা বান্দা। ফেসবুকেই পারলে এরে মারে তো ওরে ধরে। ইনারা একটার পর একটা স্ট্যাটাস দিয়ে যান নিজস্ব জ্বালাময়ীতা নিয়ে। স্ট্যাটাস দেয়ার পরে হয়তো নাক ডেকে ঘুমান। ঘুম থেকে উঠে কোন নেতা কি লিখেছন এই বিষয়ে সেটা শেয়ার করেন।

চুপচাপ ১: এরা কিছুই করছেনা। পছন্দ করছেনা যে একটা মানুষের উপড় এমন হোক, কিন্তু এই লোকটা বেশি বাইড়া গেছে বা আমার দলের বিরুদ্ধে বলে। সুতরাং নো কমেন্টস।  

চুপচাপ ২: এরা মজায় আছে। বেশ খুশি যে এই ঘটনা ঘটেছে, মুখোশ খুলে যাবে বলে কিছু বলেনা। কিন্তু ঘটনার মজা নিচ্ছে পুরোদমে। মাঝে মাঝে জাফর বিরোধী কমেন্টে লাইক দিয়ে আসে, তাও খুব সন্তর্পনে। ভাবে যে কেউ মনে হয় দেখেনা!

সমস্যার মূল দেখাঃ এরা জাফর বা অন্য কোনো ব্যাপার দেখেনা। এরা দেখে যে এই ঘটনাটা দেশের জন্য ভালো না, এটার মূল খুজে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ইনারা যথাসম্ভব বাংলায় ই লিখেন এই বিষয়ে, পাছে দেশের বদনাম হয়। এদের মধ্যে দল না ব্যক্তি কানা লোকজন কম বা থাকলেও ইনারা তার প্রভাবমুক্ত।

মুরীদে জাফরঃ ঐ যে প্রথম ক্যাটেগরি আছে না, এরা তাদের মতোই সিক। এরা অবশ্য শিক্ষিত সিক। এদের আচরন ভয়াবহ রকমের পেইনফুল কারন এরা একাধারে মুরীদে জাফর, মুক্তমনা, প্রগতিশীল ইত্যাদি ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এরা অধ্যাপক মহাশয়কে একেবারে একক দেবতা বানিয়ে ফেলেছে। এদের সাথে বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতৃত্বের এই বিষয়ের উপড় কাজকর্মের অনেক মিল আছে [আমি এটা নিয়ে বলছি পরে]।

এদের কাছে অধ্যাপক মহাশয় মাটিতে না বরং আকাশের অনেক উচুতে অবস্থান করেন, উনি সাধারন নাগরিকের মতো নন, উনি ই পুরো বাংলাদেশ। উনাকে কিছু বল্লেই ফাসি দিয়ে দিবে এমন একটা ভাব। অধ্যাপক ইকবাল সকল ধরনের সমালোচনার উপড়ে। উনারা তথাকথিত গনতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল। উনারা বলে থাকেন যে উনারা মুক্তমনের চর্চা করেন এবং অন্যের মতকে সম্মান করেন। কিন্তু বাস্তব হলো, উনারা অন্যের মতকে সম্মান তো দুরের কথা, যখন অধ্যাপক জাফর ইকবাল প্রসঙ্গ আসে, তখন অন্যকে কোনো মতই প্রকাশ করতে দিতে চান না। তখন ব্যাপারটা এমন দাড়ায় যে এইদেশে অধ্যাপক ইকবাল এবং উনার সমর্থকরা ই শেষ কথা। অন্য কারো কোনো অধিকার নাই। ইনাদের মন এতো মুক্ত যে ইনারা ইসলাম ধর্ম নিয়ে যাতা বলে ফেলেন। কিন্তু ভুলে যান যে এটা ইসলাম না এবং এই ধর্মের বিলিয়ন অনুসারি আছেন যারা অন্যকে আঘাত করেন না। কিছু কিছু মুক্তমনাদের কাজ দেখে মনে হয়, ইসলাম কে গালি দেয়া হচ্ছে মুক্তমন থাকার একমাত্র বৈশিষ্ট। উনাদের এহেন কর্মকান্ড দেখে প্রশ্ন আসে জাফর ইকবাল আসলে কে?

Saturday, January 6, 2018

নতুন বছর, কিন্তু আমি কতোটা নতুন?

এইবার ই মনে হয় প্রথমবার যখন নতুন বছর আমার মধ্যে তেমন কোনো শিহরণ জাগায় নি। বুজতে পারছিনা, নতুন বছরকে স্বাগত জানানোটা পুরনো হয়ে গেছে নাকি আমি বুড়ো হয়ে গেছি। নাকি জীবনের চাপে পিষ্ট হয়ে আছি?!

আমি বুজতে পারি বা না পারি, নতুন বছর এসেছে যেমন করে আগেও আসতো। কিন্তু টের পাচ্ছিনা ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার থেকে ১জানুয়ারির সকালে আমি কতটা আলাদা।এখনো মনে পড়ে মিলেনিয়ামের নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর কথা। আমরা তিনজন ঢাবির টিএসসি থেকে হেটে মিরপুর ২ এ চলে গেছিলাম এক বন্ধুর বাসায়। টের ই পাইনি এতো পথ হেটেছি এতো রাতে। যাত্রাপথে কতোনা মজা করেছি রাস্তায় নেমে আসা বিভিন্ন মানুষের সাথে। অদ্ভুত কেটেছিলো রাতটি। তবে সকালবেলায় পত্রিকায় বাধনের ঘটনা জানার পর আর ভালো লাগেনি। ঐরকম শিহরন আর কোনো নতুন বছর এখনো জাগাতে পারেনি।

সবাইকে নতুন বছরের শুভকামনা, ভালো কাটুক সবার সময়

:: প্লেজারিজম এবং ফিডম ফাইটারস এর এস নিয়ে টানাটানি ::

 মানুষজন প্লেজারিজম নিয়ে কথা বলছে ফেসবুকে। ভালো লাগছে যে এতে যদি কারো কারো সেলফ - এস্টীম জন্মায়। চাকরির শুরুতে সব কাজ করার পরে যখন দেখতাম আর...