Friday, July 24, 2020

দুল হিজ্জাহ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত

২২ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে আরবি বছরের শেষ মাস, দুল হিজ্জাহ। চাঁদ দেখার বৈষম্য অনুযায়ী এই মাস একেক দেশে হয়তো একেক দিন শুরু হচ্ছে। এই শুরুটা গুরুত্বপূর্ন এই কারনে যে এই মাসের ১০ তারিখে ঈদ উল আযহা। তাই সবাই শুরু নিয়ে সতর্ক থাকে, চাঁদ দেখে নিশ্চিত হতে চায়। এই মাসে হজ্ব হবার কারনে এই মাসকে হজ্বের মাস ও বলা হয়ে থাকে। হজ্ব ও কোরবানি মিলিয়ে এই মাস ইতিমধ্যে অনেক গুরুত্ব বহন করছে।


কিন্তু এটার অন্য গুরুত্ব ও আছে...
- ইসলামিক রীতি অনুযায়ী এই মাসের প্রথম ১০ দিন পুরো বছরের শ্রেষ্ট দিনসমুহ। তাই এই দিনগুলোতে যতবেশি ইবাদত করা যায় তা করার জন্য জোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ৯ তারিখটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। ৯ তারিখ আরাফাহ এর দিন। হাজীরা এই দিন আরাফার ময়দানে সমবেত হন।
- ৯ তারিখে রোজা রাখার জন্য বলা হয়েছে শক্তভাবে। ১-৯ তারিখ পর্যন্ত অনেকে রোজা রাখে এবং সেটাকে বিশেষভাবেই উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু একেবারে না পারলে অনেক ইবাদত এবং ৯ তারিখে রোজা রাখার জন্য জোরালো পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এগুলোর কোনটাই বাধ্যতামূলক না, তবে অনেক ফজিলত থাকাতে বার বার বলা হয়েছে।
- ৯ তারিখের রোজার ফজিলত কি? বোখারি এবং তিরমিধী বাদে বাকি সকল সূত্রে বলা হয়েছে যে এই রোজা দুই বছরের (গতবছর + পরেরবছর) গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়। আমি কিছুটা পড়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তেমন কুল কিনারা করতে পারিনি। এতোটুকু বুজেছি এই রোজা অত্যন্ত ফজিলতের, কিন্তু দুই বছর নিয়ে নিশ্চিত করতে বলতে পারছিনা। সামর্থ্য থাকলে কারোরই এই রোজা মিস করা উচিৎ না।


এইরকম আরেকটি রোজা আছে, আশুরার দিন। মুহাররম মাসের ১০ তারিখে। এই রোজারও অত্যত্ন ফজিলত। অনেক সূত্রে এসেছে এটা এক বছরের (আগের বছরের) গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়। আবারো আমি নিশ্চিত করছিনা, তবে এতোটুকু বলতে পারি এই রোজাটিও অনেক সওয়াবের। তাই রাখা উচিৎ। এর সাথে শিয়াদের কোন ইস্যুর কোন সম্পর্ক নাই, এই দিনে মুসা আঃ ফেরাউনের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন।


যদি বছরের হিসাব ধরে নেই, তাহলে এই দুই রোজা তিন বছরের গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়। কিভাবে?
- ধরুন, আপনি আরাফাহ এর দিনে রোজা রাখলেন ২০২০ সালে। তাহলে গুনাহ মাফ হচ্ছে ২০১৯ ও ২০২১ সালের।
- দুল হিজ্জাহ মাসের পরের মাসই মুহাররম মাস। এটা আরবি বছরের প্রথম মাস, তার মানে বছর বদলে গেছে। এই মাসের ১০ তারিখে আশুরার রোজা রাখলে গত বছর মানে ২০২০ সালের গুনাহ মাফ হবার কথা।
- তাহলে দুই রোজা মিলে ২০১৯, ২০২০, ২০২১ সালসমূহের গুনাহ মাফ হবার কথা।
- আবারো বলে নিচ্ছি, কিছু কিছু সূত্রে এসেছে এই হিসাব, কিন্তু বোখারীতে আসেনি।


পড়ে কি মনে হচ্ছে হাদিস জটিল ব্যাপার? আসলে জটিলতা এসেছে আমরা প্রায় ১৫০০ বছর পরে পড়ছি বলে। আমাদের নিশ্চিত হতে হয় যে হাদিসের সূত্র সঠিক আছে কিনা। কিন্তু হাদিস নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা না থাকলে এই সূত্র বুঝা মুশকিল, আর সেখানেই হাদিস কঠিন হয়ে দাড়ায় আমাদের জন্য। যারা নবীজীর মুখে এসব শুনেছেন তাদের কাছে নিশ্চয়ই কঠিন মনে হয়নি।


আমি কেন এখন লিখলাম? ঐ যে এই সময় বেশী বেশি করা পুণ্য কামাইতে বলা হয়েছে – তাই করার চেষ্টা করছি। আপনিও চেষ্টা করুন।


ওহ, আচ্ছা, প্রশ্ন আসতে পারে, আরবি মাস নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে কেন? কারন, নবীজী আরবি মাসের পালাক্রম ঠিক করে দেয়ার পরে বলেছিলেন যে এই ক্রম অনুসারেই সময় ছিলো যখন আল্লাহ স্বর্গ এবং দুনিয়া সৃষ্টি করেছিলেন। মানে হলো এই পালাক্রম হচ্ছে একেবারে অরিজিনাল। [সহি হাদিস, বোখারী থেকে]। এখানে পালাক্রম বলতে ১২ মাসের বছরকে বুঝানো হয়েছে। এবং বলা হয়েছে ৪ টা মাস পবিত্র যাদের মধ্যে তিনটা পরপর আসে – দুল কাদাহ, দুল হিজ্জাহ, মুহাররম। অন্য মাসটি হলো রজব।

No comments:

Post a Comment

:: প্লেজারিজম এবং ফিডম ফাইটারস এর এস নিয়ে টানাটানি ::

 মানুষজন প্লেজারিজম নিয়ে কথা বলছে ফেসবুকে। ভালো লাগছে যে এতে যদি কারো কারো সেলফ - এস্টীম জন্মায়। চাকরির শুরুতে সব কাজ করার পরে যখন দেখতাম আর...