মানুষজন প্লেজারিজম নিয়ে কথা বলছে ফেসবুকে। ভালো লাগছে যে এতে যদি কারো কারো সেলফ - এস্টীম জন্মায়। চাকরির শুরুতে সব কাজ করার পরে যখন দেখতাম আরেকজন হাসিমুখে স্বাক্ষর করছে তখন একেবারেই মাননীয় স্পীকার হইয়া যাইতাম... আরো বড় স্পীকার হইয়া গেছিলাম যখন দুই বিজ্ঞজন একদিন ফ্রিডম ফাইটারস এর এস ধইরা টান দিয়া আমাকে কথা শুনাইয়া ঐ আরেকজনরে কইলো যে কি মিয়া তুমি এদের সুপারভাইজ করোনা?!! আমি রুম থেকে বের হয়ে অনেক হেসেছিলাম - তবে তা রাগে [ও হ্যাঁ, রাগে হাসতে পারা কঠিন, কিন্তু কাজে দেয় হেভভি]!
ব্যাপারটা ছিলো এইরকম - স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ছেলেমেয়েরা অনুষ্টান করবে এবং সেখানে দুজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আসবে তাদের কথা শোনার জন্য। একেবারেই 'সময় নাই গময় নাই, বাবু একখান টিকেট' টাইপের আবদার নিয়ে এসেছিলো পোলাপাইন যে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে তারা কনসার্টসহ বিশাল একখান অনুষ্টান করবে মুক্তমঞ্চে। এজন্য তারা আবার স্পন্সরও জোগাড়ের চেষ্টা করবে। বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছেলেমেয়েদের কোন আবদারই তেমন একটা ফেলিনি, এইটাও ফেললাম না। আর এদের উৎসাহও ছিলো দেখার মতো। তবে সবার যে ছিলো তা কিন্তু না ... এই যেমন আমি পোলাপাইনের সাথে মুক্তমঞ্চে যখন কার্পেট ফেলছিলাম তখন এদেরই কেউ কেউ আবার মঞ্চের একটু দুরে দাড়িয়ে তামাশা দেখছিলো বা সিগারেট ফুকছিলো!
অনুষদের বিজ্ঞ ও তাদের শিষ্যরাও এই পোলাপাইনের মতো তামাশা দেখছিলো এবং যতভাবে পারে এটা বন্ধ করার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু উনাদের জন্য মুশকিল হয়ে গেছিলো ব্যাপারটা মূলত তৎকালীন উপাচার্যের কারনে। আমরা উপাচার্যের কাছে গিয়ে বললে উনি সাথে সাথে অনুমতি দিয়ে বললেন যে আমি নিজেও থাকবো। এটা খুবই একটা ভালো উদ্যোগ ছিলো এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেছি যে তরুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনতে চায় এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। আমার ধারনা উপাচার্য মহোদয়ও একই কারনে সাথে সাথেই অনুমতি দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অনুষদের বিজ্ঞরা তা মানবেন কেন যেখানে আবার উনাদের আঙুল ঢুকানোর যায়গা নাই। এমতাবস্থায়, বিজ্ঞজনরা আমাকে ডাকলেন। হালকা বকাঝকা করলেন যে কেন এসব ঝামেলায় যাচ্ছি। আমি ঐটুকুকে আশীর্বাদ হিসেবে নিয়ে জানালাম যে ছেলেমেয়েগুলো রাত বিরাতে ধুমাইয়া কাজ করছে। তখনো তো এতো কিছু জানতাম না যে উপাচার্য অনুমতি দিলে আর কিছু লাগেনা... উনাদের বকাঝকার আশীর্বাদের পরে এলো আসল কাহিনী ... ছেলেমেয়েরা নিজেদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ থেকে শেখ মুজিব হত্যা মামলার বাদীকে প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন। উনি বলেছেন যে উনাকে নিরাপত্তা দিতে পারলে উনি আসবেন। মজার কথা হলো উপাচার্য সেই নিরাপত্তা দিতে রাজী হয়েছেন। তো আমরা উনাকে সহ দুজন মুক্তিযোদ্ধার কথা শুনবো প্ল্যান নিয়েই কাজ করছিলাম। কিন্তু বিজ্ঞজনদের তীব্র বাধা পেলাম বাদীর ব্যাপারে। বাধ্য হয়ে উনাকে বাদ দিলাম। কথা হলো দুজন সাধারন মুক্তিযোদ্ধা আসবেন তাহলে। এর পরে আবার সমস্যা যে মুক্তিযোদ্ধাদের এতো কথা শোনার সময় কই, একজন করে দাও। আবারো মেনে নিলাম - একজন করে নিলাম।
এখন এই একজন তো নতুন কাহিনী। স্পন্সরদের কাছে যেসব চিঠি লিখেছিলাম সব জায়গায় দুজনের কথা বলা ছিলো এবং লেখা ছিলো freedom fighters. পরে যখন একজন হয়ে গেলো চিঠি তাড়াহুড়ো করে এডিট করতে গিয়ে fighters এর S টা আর কাটা কয়নি। আমাদের বিজ্ঞজনরা তন্ন তন্ন কইরা আর কোন ভুল খুইজা না পাইয়া এই এস নিয়া আমারে এক ধাপ কইলেন... হেভভি প্রেস্টিজে লেগেছিলো, কিন্তু পোলাপাইনের দিকে তাকিয়ে কিছু কই নাই।
সেই অনুষ্টানটা শেষ পর্যন্ত হয়েছিলো। মাত্র ৮৯ দিন বয়সী একটা বিভাগ মুক্তমঞ্চে একক অনুষ্টান করেছে যাদের কারো কোন ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলোনা। জাবিতে এতো কম বয়সী কোন বিভাগ এর আগে এমনটা করেছে আমি শুনিনি। কপাল ভালো যে তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিগলির টোকাই মার্কা রাজনীতি সম্পর্কে জানতাম না। তাহলে হয়তো ভয়েই রাজী হইতে পারতাম না পোলাপাইনের কথায়!!
No comments:
Post a Comment