অনেক অনেকদিন পর কিছু ফাকা সময় পেলাম। কেমন যেন ফ্রি ফ্রি লাগছিলো। ভাবলাম যে এলাকায় থাকি তা একটু চিনে আসি। একটা ইজিবাইক পেলাম, যেদিকে গেলো গেলাম, এক যায়গায় নেমেও গেলাম। কিছুক্ষন এমনি হেঁটে চারিদিক দেখলাম। চোখের চার সীমানায় অসংখ্য কন্সট্রাকশন এর কাজ হচ্ছে। আবাসিক বা বাণিজ্যিক। উন্নত প্রযুক্তির অনেক বড় বড় মেশিন ব্যবহার হচ্ছে, এগুলো এর আগে আমি দেখেছি কিনা সন্দেহ আছে। হাজারো মানুষ কাজ করছে। বাঁশ কাটা থেকে বড় বড় স্লাভ সরানো পর্যন্ত। আশেপাশে তাজা শাক সবজিও বিক্রি হচ্ছে; একেবারেই তাজা, স্থানীয় ক্ষেতের ফসল।এতো মানুষ কাজ করছে, এদের খাবার দাবারের আয়োজনটা বেশ ভালোই মিটে যায় এইসব শাক সবজিতে।
আরেকটু সামনে এগিয়ে একটা টং দোকান পেলাম চা পান বিস্কিট বিক্রি করার। কেমন যেন সেই রুবি রায়ের গানের মতো করে পুরনো দিনে পাউরুটি চা খাবার কথা মনে পড়লো। ভাবলাম ট্রাই করি। স্বাদ এখনো আগের মতোই আছে। আমরা বড় হলেও পাউরুটি চায়ের স্বাদ বড় হয় নি, এখনো তরুন। এক লোক আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে ছিলো যে মনে হলো উনি আমার এই পাউরুটি/চা খাওয়া মেনে নিতে পারছেন না। মনে হলো আমার মতো ইন করা লোকজন কে সে এই কাজ এর আগে করতে দেখেনি। অন্য সময় হলে বিব্রত হতাম, কিন্তু আজ মনে হলো, আমি তো পুরনো সময় ভ্রমণের ট্রেনে আছি, তাই কে কি ভাবলো তাতে কি আসে যায়! কিন্তু বান্দা নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত বললাম ‘ভাই কিছু বলবেন?’। একটা টু/টা শব্দও করলেন না, শুধু তাকানো থামালেন। তাকানো থামালেও ভদ্রলোক চেহারায় একটা ব্যঙ্গ ভাব রেখেই দিলেন। আমি ভাবলাম লোকটা আমার সম্পর্কে এখন কত কি খারাপ কথা ভাবছে ! পাত্তা দিলাম না, পাছে পাউরুটি/চা এর স্বাদ থেকে দুরে সরে যাই! এরপরে আবার কবে খেতে পারবো তার তো ঠিক নাই!
আবার হাঁটা দিলাম। ইজিবাইকগুলো আমাকে ‘যাবেন কিনা মামা’ জিজ্ঞেস করতে করতে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করাই বন্ধ করে দিলো। আমি সামনে যেতেই লাগলাম। কুরিল ফ্লাইওভার মোড়ের উপড় দিয়ে বিমানগুলো উপড় থেকে আরও উপড়ে উঠে যাচ্ছে দেখতে দেখতে আগালাম। ভাবলাম এবার ফিরি। ফিরার পথে দেখলাম এক চাচা ক্ষেত থেকে করল্লা, চালকুমড়া, আরেকটা যেন কি চিনিনা তুলছেন বিক্রি করবেন বলে। দুটা চালকুমড়া কিনে ফিরলাম। ফিরতে ফিরতে ভাবলাম, এইরকম তাজা জিনিস খাওয়ার মজাই আলাদা। একটা ভালোলাগা নিয়ে ফিরছিলাম, দুই কারনে। এক - মানুষজন কাজ করছে এবং ফলন ভালো, দুই - দেশীয় একজন উৎপাদনকারীর কাছে থেকে কিনেছি বলে। আর নাহলে তো পিয়াজও ভারতেরটাই খেতে হয়!
বাসায় আসার পরেই পুলিশের কল। পাসপোর্ট এর ভেরিফিকেশন। ভয় পেলাম যে কোন ঝামেলায় যেন পড়তে যাচ্ছি। উনার সাথে দেখা করতে যেতে হবে কিছু কাগজপত্র নিয়ে। গেলাম। অনেক কিছুই ভেবেছিলাম - নেগেটিভ সবকিছু। কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা। উনি কাগজপত্র দেখে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দিলেন। আমাকে কফি খাওয়াতে পারেন নাই বলে দুঃখ করলেন [কফির দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো]। আমি অবাক হলাম যে পুলিশ বন্ধুর মতো আচরণ করছে। ভালো লাগলো যে উনাদের মতো ইয়ং ছেলেরা হয়তো কোনো পরিবর্তনের আশা নিয়ে কাজ করছেন। শুভকামনা উনাদের জন্য।
ক্ষুধা লেগে গেলো। ভাবলাম কিছু খাঁই। টোকিও স্কয়ার এর খাবারের দোকানের ভাবসাব দেখে বিরক্ত লাগলো। বেরিয়ে গেলাম। ভাবলাম একটু ঢাকার রাস্তায় হাটি। আজকের দিনটাই অন্যরকম। হাটতে হাটতে এক জায়গায় দেখলাম অনেক মানুষ চটপটি খাচ্ছে। আবারো সেই রুবি রায়, অর্ডার দিয়েই দিলাম। চটপটি খাওয়ার পরে ভাবলাম ফুসকা তো আর কোনো দোষ করেনি। খেলাম ফুসকাও। বেশি বেশী ঝাল দিয়ে; স্বাদই অন্যরকম। আমি জানি হয়তো বলবেন এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত না। ফুসকা বানানোর যেসব ভিডিও দেখেছি তাতে আর খাবারই কথা না। কিন্তু খেলাম এবং এই স্বাদ আর কোথাও পাওয়া যাবেনা বলেই আমার ধারনা।
ফুসকা খেতে যাবার সময় এক চাচাকে দেখলাম আমড়া বিক্রি করতে। এই জিনিস তো পরখ না করলেই নয়। কিন্তু চাচার দোকানে যাবার পথে চোখ গেলো চানাচুর এর দোকানে। মুড়ি চানাচুরের মিশ্রণ ছোটবেলায় কতবার খেয়েছি তা গুনেও শেষ করা যাবেনা। বিশেষ করে লঞ্চে করে যখন ঢাকা আসতাম, ভোরবেলায় মুন্সিগঞ্জ থেকে অনেক হকার উঠতেন এগুলো নিয়ে। আমি তো মনে হয় মুন্সিগঞ্জের জন্য অপেক্ষা করতাম এই মুড়ি/চানাচুর বা নারিকেল মুড়ি খাবার জন্য। সেই স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। বড় হয়ে কোনোদিন আর সেই স্বাদ পেয়েছি বলে মনে হয় না। ভাবলাম চানাচুর খেয়েই যাই। মামা বানিয়ে দিলো, স্পেশাল বোম্বাই মরিচ দিয়ে। ঝালে পুরো মুখ পুড়ে গেলো, তবে অন্যরকম স্বাদ ছিলো। নাহ, ছোটবেলার সেই স্বাদ পাইনি, তবে ভালো লেগেছে। পরের গন্তব্য আমড়ার দোকান। আমড়ার স্বাদও বদলায়নি। এখনো একই আছে। চিরতরুন।
মরিচের অত্যাচার তখন চরমে। পানির দোকানও পাচ্ছিলাম আবার মামাদের কাছে রাখা পানিতেও মন সায় দিচ্ছিলোনা। কি আর করা, এক মামা ডাব ডাব করে চিৎকার করছিলেন। ডাব খেলাম। মামা বললেন হালকা নরম নারিকেল হবে। কিন্তু বেশ শক্ত নারিকেল হলো এবং তার এক টুকরা নিয়েই গন্তব্যের বাসে উঠে বসলাম। বাসায় পৌঁছলাম রাত ১২ টার পরে।
এক বিকাল/রাতে ঢাকার রাস্তায় যা যা পাওয়া যায় তার এক অংশ খাওয়া শেষ করলাম। দেশে থাকতে খেতাম না এসব, খেলেও খেতাম ভালো কোনো জায়গায়। কিন্তু অনেকদিন দেশে না থাকলে যা হয়, এগুলো চোখের সামনে অমৃত হয়ে ঘোরাপেরা করে। রাস্তার পাশের টং দোকানেরগুলোই বেশি জ্বালায়। তাই নিজেকে একটু ঝালিয়ে নিলাম!
আরেকটু সামনে এগিয়ে একটা টং দোকান পেলাম চা পান বিস্কিট বিক্রি করার। কেমন যেন সেই রুবি রায়ের গানের মতো করে পুরনো দিনে পাউরুটি চা খাবার কথা মনে পড়লো। ভাবলাম ট্রাই করি। স্বাদ এখনো আগের মতোই আছে। আমরা বড় হলেও পাউরুটি চায়ের স্বাদ বড় হয় নি, এখনো তরুন। এক লোক আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে ছিলো যে মনে হলো উনি আমার এই পাউরুটি/চা খাওয়া মেনে নিতে পারছেন না। মনে হলো আমার মতো ইন করা লোকজন কে সে এই কাজ এর আগে করতে দেখেনি। অন্য সময় হলে বিব্রত হতাম, কিন্তু আজ মনে হলো, আমি তো পুরনো সময় ভ্রমণের ট্রেনে আছি, তাই কে কি ভাবলো তাতে কি আসে যায়! কিন্তু বান্দা নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত বললাম ‘ভাই কিছু বলবেন?’। একটা টু/টা শব্দও করলেন না, শুধু তাকানো থামালেন। তাকানো থামালেও ভদ্রলোক চেহারায় একটা ব্যঙ্গ ভাব রেখেই দিলেন। আমি ভাবলাম লোকটা আমার সম্পর্কে এখন কত কি খারাপ কথা ভাবছে ! পাত্তা দিলাম না, পাছে পাউরুটি/চা এর স্বাদ থেকে দুরে সরে যাই! এরপরে আবার কবে খেতে পারবো তার তো ঠিক নাই!
আবার হাঁটা দিলাম। ইজিবাইকগুলো আমাকে ‘যাবেন কিনা মামা’ জিজ্ঞেস করতে করতে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করাই বন্ধ করে দিলো। আমি সামনে যেতেই লাগলাম। কুরিল ফ্লাইওভার মোড়ের উপড় দিয়ে বিমানগুলো উপড় থেকে আরও উপড়ে উঠে যাচ্ছে দেখতে দেখতে আগালাম। ভাবলাম এবার ফিরি। ফিরার পথে দেখলাম এক চাচা ক্ষেত থেকে করল্লা, চালকুমড়া, আরেকটা যেন কি চিনিনা তুলছেন বিক্রি করবেন বলে। দুটা চালকুমড়া কিনে ফিরলাম। ফিরতে ফিরতে ভাবলাম, এইরকম তাজা জিনিস খাওয়ার মজাই আলাদা। একটা ভালোলাগা নিয়ে ফিরছিলাম, দুই কারনে। এক - মানুষজন কাজ করছে এবং ফলন ভালো, দুই - দেশীয় একজন উৎপাদনকারীর কাছে থেকে কিনেছি বলে। আর নাহলে তো পিয়াজও ভারতেরটাই খেতে হয়!
বাসায় আসার পরেই পুলিশের কল। পাসপোর্ট এর ভেরিফিকেশন। ভয় পেলাম যে কোন ঝামেলায় যেন পড়তে যাচ্ছি। উনার সাথে দেখা করতে যেতে হবে কিছু কাগজপত্র নিয়ে। গেলাম। অনেক কিছুই ভেবেছিলাম - নেগেটিভ সবকিছু। কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা। উনি কাগজপত্র দেখে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দিলেন। আমাকে কফি খাওয়াতে পারেন নাই বলে দুঃখ করলেন [কফির দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো]। আমি অবাক হলাম যে পুলিশ বন্ধুর মতো আচরণ করছে। ভালো লাগলো যে উনাদের মতো ইয়ং ছেলেরা হয়তো কোনো পরিবর্তনের আশা নিয়ে কাজ করছেন। শুভকামনা উনাদের জন্য।
ক্ষুধা লেগে গেলো। ভাবলাম কিছু খাঁই। টোকিও স্কয়ার এর খাবারের দোকানের ভাবসাব দেখে বিরক্ত লাগলো। বেরিয়ে গেলাম। ভাবলাম একটু ঢাকার রাস্তায় হাটি। আজকের দিনটাই অন্যরকম। হাটতে হাটতে এক জায়গায় দেখলাম অনেক মানুষ চটপটি খাচ্ছে। আবারো সেই রুবি রায়, অর্ডার দিয়েই দিলাম। চটপটি খাওয়ার পরে ভাবলাম ফুসকা তো আর কোনো দোষ করেনি। খেলাম ফুসকাও। বেশি বেশী ঝাল দিয়ে; স্বাদই অন্যরকম। আমি জানি হয়তো বলবেন এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত না। ফুসকা বানানোর যেসব ভিডিও দেখেছি তাতে আর খাবারই কথা না। কিন্তু খেলাম এবং এই স্বাদ আর কোথাও পাওয়া যাবেনা বলেই আমার ধারনা।
ফুসকা খেতে যাবার সময় এক চাচাকে দেখলাম আমড়া বিক্রি করতে। এই জিনিস তো পরখ না করলেই নয়। কিন্তু চাচার দোকানে যাবার পথে চোখ গেলো চানাচুর এর দোকানে। মুড়ি চানাচুরের মিশ্রণ ছোটবেলায় কতবার খেয়েছি তা গুনেও শেষ করা যাবেনা। বিশেষ করে লঞ্চে করে যখন ঢাকা আসতাম, ভোরবেলায় মুন্সিগঞ্জ থেকে অনেক হকার উঠতেন এগুলো নিয়ে। আমি তো মনে হয় মুন্সিগঞ্জের জন্য অপেক্ষা করতাম এই মুড়ি/চানাচুর বা নারিকেল মুড়ি খাবার জন্য। সেই স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। বড় হয়ে কোনোদিন আর সেই স্বাদ পেয়েছি বলে মনে হয় না। ভাবলাম চানাচুর খেয়েই যাই। মামা বানিয়ে দিলো, স্পেশাল বোম্বাই মরিচ দিয়ে। ঝালে পুরো মুখ পুড়ে গেলো, তবে অন্যরকম স্বাদ ছিলো। নাহ, ছোটবেলার সেই স্বাদ পাইনি, তবে ভালো লেগেছে। পরের গন্তব্য আমড়ার দোকান। আমড়ার স্বাদও বদলায়নি। এখনো একই আছে। চিরতরুন।
মরিচের অত্যাচার তখন চরমে। পানির দোকানও পাচ্ছিলাম আবার মামাদের কাছে রাখা পানিতেও মন সায় দিচ্ছিলোনা। কি আর করা, এক মামা ডাব ডাব করে চিৎকার করছিলেন। ডাব খেলাম। মামা বললেন হালকা নরম নারিকেল হবে। কিন্তু বেশ শক্ত নারিকেল হলো এবং তার এক টুকরা নিয়েই গন্তব্যের বাসে উঠে বসলাম। বাসায় পৌঁছলাম রাত ১২ টার পরে।
এক বিকাল/রাতে ঢাকার রাস্তায় যা যা পাওয়া যায় তার এক অংশ খাওয়া শেষ করলাম। দেশে থাকতে খেতাম না এসব, খেলেও খেতাম ভালো কোনো জায়গায়। কিন্তু অনেকদিন দেশে না থাকলে যা হয়, এগুলো চোখের সামনে অমৃত হয়ে ঘোরাপেরা করে। রাস্তার পাশের টং দোকানেরগুলোই বেশি জ্বালায়। তাই নিজেকে একটু ঝালিয়ে নিলাম!