আমার নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে অধ্যাপক জাফর
ইকবাল এর মুরীদদের সাথে। ইনারা বেশ শিক্ষিত মুরীদ ই। একজন ছিলেন আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েরই
সিনিয়র। আমি অধ্যাপক ইকবাল এর একটা কলাম নিয়ে কথা বলছিলাম যে এই কলামটা কিভাবে দেশের
হাজারো শিক্ষককে অপমান করে। আমার সিনিয়র সেখানে এসে হাজারো ঝাঝালো যুক্তি দেখালেন প্রায়
১৫-২০ টা কমেন্ট করে। আমি উনাকে বার বার ই বলছিলাম যে আপনি কলামটা পড়েন। অত্যন্ত সুখের
বিষয় হলো যে উনি ১৫-২০টা কমেন্ট (যেগুলোতে আমাকে যা তা ভাষায় আক্রমন করেছেন) করার পড়ে
কলামটা দয়া করে পড়েছেন। পড়ার পরে আমাকে বললেন যে আমার কথায় যুক্তি আছে। এবং এর পরে
উনি আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিলেন। এই ভদ্রলোক অনেক বড় পদে অনেক বড় এক প্রতিষ্টানে চাকরি
করেন। ইনার এটিটিউড দেখুনঃ ইনি কলামটা ভালো করে পড়েন ই নি, কিন্তু পীরবাবা লিখেছেন
তাই এক বাক্যে গিলেছেন। নিজের গাড়ের উপড় যে একটা মাথা আছে সেটা ভুলে গেছেন এবং সমালোচনাকারীদের উপড় বরং হামলে পড়েছেন। অনেক সময়
নেয়ার পরে যদিও বুঝেছেন পীরবাবা এইবার পুরো সঠিক বলেন নি, উনি সেটা হজম করতে পারেন
নি। এদের কাছে অন্যের মান সম্মান কোনো ব্যাপারই না !
এইরকম আরো অনেক মুরীদ দেখার সৌভাগ্য (?!)
হয়েছে আমার। এক মুরীদকে দেখলাম অধ্যাপক ইকবাল কে নিয়ে সে কট্টরদের চেয়েও বড় কট্টর।
ইনি শাবির ভিসিকে বিচি পর্যন্ত বলতে ছাড়েন নি; কারন সেই অধ্যাপক জাফর ইকবাল; অধ্যাপক
ইকবালের সাথে ভিসির কি ঝামেলা হয়েছিলো যেনো তখন। ইনারা কিন্তু ভয়াবহ শিক্ষিত লোকজন।
ইনাদের শিক্ষা নিয়ে কথা বলা বোকামি হবে। কিন্তু উনাদের মানসিক বিবর্তন নিয়ে কথা বলা
যেতে পারে। ইনারা গনতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন, প্রগতি নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু গনতন্ত্র বলতে
বুঝেন যে শুধু উনারাই কথা বলবেন বা উনাদের কোনো সমালচনা করা যাবেনাসহ একনায়কতন্ত্রের
সকল নিয়মাবলী। ইনারা ভুলে যান যে জাফর ইকবাল আজকের জাফর ইকবাল হতে পেরেছেন শুধুমাত্র
অন্যের সমালোচনার মধ্য দিয়ে গেছেন বলেই। একটা পেপার পাবলিশ করতেও একজন অথরকে অপরিচিত
রিভিউয়ারের কঠিন রিভিউ পার করে কোয়ালিটি নিশ্চিত করেই তা করতে হয়। কেউ যদি মনে করে
যে আমি বেস্ট পেপার লিখেছি, আমাকে সমালোচনা বা রিভিউ করার কিছু নাই, তাকে দিয়ে কোনোদিনই
তেমন ভালো কিছু হবেনা। তাই অধ্যাপক ইকবালের ফ্যানদের উনার সমালোচনা নিতে না পারার কারনটা
আমি ঠিক বুঝে উঠিনা। এখানে বলে রাখি, অধ্যাপক ইকবাল নাস্তিক না আস্তিক এই ধরনের আলোচনাকে
আমি সমালোচনা মনে করিনা। আমি মনে করি এটা কারো আলোচনার টপিকই হওয়া উচিৎ না। এটা পুরোই
অধ্যাপকের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
আরেক কিসিমের মুরীদ দেখলাম যারা দেশে এতো
খুন খারাবি হবার সময় টের পায়নি, কিন্তু মুখচেনা কিছু লোক এই যেমন অধ্যাপক ইকবাল এর
ঘটনার পরে বিশাল ইংরেজী স্ট্যাটাস দিয়ে পুরো দুনিয়াকে জানানোর আপ্রান চেষ্টা করছেন
যে বাংলাদেশ কিন্তু মৌলবাদীতে ভরে গেছে। ওহ আচ্ছা, উনাদের এতো ইনোসেন্ট ভাববেন না যে
উনারা হয়তো বাংলায় লিখতে পারেন না। বাকিসব স্ট্যাটাস কিন্তু উনারা বাংলায়ই দেন। দরকার
হলে হিন্দীটাও বাংলায়ই লিখেন ইনারা। এদের সাথে
জামাতীদের পার্থক্য কোথায়? জামাতীরা বাংলাদেশ নিয়ে যতসব খারাপ খবর আছে তা ইংরেজীতে
দেয় এবং সবাইকে অনুরোধ করে শেয়ার করে বিদেশিদের দেখাতে। মজার ব্যাপার হলো উনারা দেশের
ভালো নিউজগুলো কিন্তু বাংলায় দেয়! এতে বুঝা যায় এদের target audience কে বা কারা। ব্রিটিশরা
আমাদের গোলামি শিখিয়ে নিজেরা সেটা ভুলে গেলেও আমরা এখনো গোলামিই করি; অন্তত ঐ ধরনের
মানসিকতা লালন পালন করি। যেই দেশটা এতো কিছু দেয় তার পিছেই লেগে থাকি !!
আমাদের দেশে বেশ কয়েক ধরনের কট্টরবাদী আছেন।
ধর্মীয় - মুসলিম হিন্দু উভয়ই; রাজনৈতিক - বাচি/মরি,
হয় আওয়ামীলীগ নাহয় বিএনপি; বিএনপি করি - শেখ মুজিব অবশ্যই খারাপ মানুষ ছিলেন; আওয়ামীলীগ
করি - জিয়ার কোনো অবদানই নাই এই দেশে। আমার অভিজ্ঞতা বলে এইসব কট্টরবাদীরা আসলে কারো
না, এরা শুধু নিজের স্বার্থে কাজ করে। এরা আজ একে ফাসায় তো কাল আরেকজনকে ফাসিয়ে দেয়।
এদের একেকজন তেলের বা ঘৃনার খনি নিয়ে চলাফেরা করে; হয় তেলবাজি করে না হয় ঘৃনা ছড়িয়ে
দেয়। কট্টরবাদীদের এই চেহারা শুধু আমাদের দেশেই না, বরং দুনিয়ার সবদেশেই এই রকম। তো
এই যখন প্রেক্ষাপট, আরেক কট্টর গ্রুপ যোগ হলো অধ্যাপক ইকবালের মতো গুনীজনকে ঘিরে। আমার
বিবেচনায় এই কট্টরবাদ না দেশের জন্য না অধ্যাপক ইকবালের জন্য শুভকর।