প্রথমেই বলে নেই আমি ক্রিকেট বিশারদ নই, তবে ক্রিকেট বিশেষ করে
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফ্যান। ফ্যান হিসেবে অন্য কোন দেশের বেলায় না হলেও দেশের ক্রিকেটের
খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করি। তার উপড় ভিত্তি করেই এটা লিখছি; ভুল হলে শুধরে দিবেন দয়া
করে।
নাসির কে যে খুব একটা চিনতাম এমনটা নয়। একদিন মাশরাফিকে বলতে
দেখলাম যে এই ছেলেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। যেহেতু ম্যাশ এর উপড় অগাধ আস্থা আমাদের,
তাই তার কথা শুনার পরে নাসিরকে নিয়ে সজাগ থাকতাম। আসলেই ভাল খেলে ছেলেটা। ম্যাশ ভুল
বলেন নি।
কিন্তু নাসির কে যেভাবে ক্রিকেট রাজনীতির স্বীকার হতে হয়েছে
তা দেখে খুব বিরক্ত হয়েছি। হঠাৎ একদিন পাপন বরাতে জানতে পারলাম নাসিরের দলে সুযোগ না
পাবার অন্যতম একটা কারন হচ্ছে তার অনেকগুলো মোবাইল ফোন এবং অনেকগুলো বান্ধবী। অনেকগুলো
বান্ধবী রাখা কতটা নৈতিক, সে বিবেচনায় আমি যাচ্ছিনা। আমি বরং বুজতে পারছিনা পাপন এর
কাজ টা কি। নাসিরের এতগুলো বান্ধবী যদি তার খেলায় বিঘ্ন ঘটায়, সেটা ম্যানেজ করার দায়িত্ব
তো পাপন সহ ম্যানেজমেন্ট টীমের বাকি সবার। নাসির বাংলাদেশের মত গরিব দেশের অনেক বেতন
পাওয়া মানুষ। তার কাছ থেকে সর্বোচ্চটা যাতে পাওয়া যায় সেটা নিশ্চিত করার জন্যই পাপন
সহ একটা বিশাল টীমকে আরও অনেক অনেক টাকা দিয়ে পোষা হচ্ছে। কিন্তু পাপন গং কি নিজেদের
কাজ করতে পারছে সঠিকভাবে? পাপনের তো নাসিরের কয়টা বান্ধবী আছে সেটা জনসম্মুখে এইভাবে
বলার দায়িত্ব না। তার দায়িত্ব নাসিরের কাছ থেকে ভালোটা বের করে আনা এবং সেজন্য যা যা
দরকার তার সবকিছু করা। এতে করে নাসির কে যদি বান্ধবীদের কাছ থেকে দুরে রাখতে হয় তাও
তার ব্যবস্থা করার কথা। উনি সেখানে ব্যর্থও হলেন এবং গায়ের জোড়ে সকল রকমের ভদ্রতা বাদ
দিয়ে একজন ক্রিকেটারকে মানুষের চোখে অনেক নিচে নামিয়ে দিলেন। খেলতে না পারার ব্যর্থতার
কারনে যদি নাসিরকে দল থেকে বাদ পড়তে হয়, তাহলে পাপন কেন এখনো বহাল তবিয়তে? ওহ আচ্ছা,
নাসিরের বাপ তো প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট না, তাইনা?
আচ্ছা, পাপনের বায়োডাটা কি কেউ দেখেছেন? উনার ক্রিকেটীয় কি কি
এমন যোগ্যতা আছে যে উনি বাংলাদেশের মত একটা উদীয়মান দলের সবচেয়ে বড় কর্তা? উনার কোন
ক্রিকেটীয় রেকর্ড আছে বলে আমি শুনিনি। উনি কি কোনদিন পাড়ার ক্রিকেট খেলেছিলেন? কেউ
জানেন কি?
এর আগেও উনারা আল আমিন কে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে পাঠানো নিয়ে
অনেক রসালো কাহিনি করেছিলেন। আল আমিন নাকি হোটেলের বাইরে অবস্থান করেছিলেন। ভাল কথা,
এইটা অন্যায়। কিন্তু উনি এই অন্যায় রোধ করার জন্য কি করেছিলেন? উনি নিজে জুয়া খেলায়
মত্ত থেকে বাইরে থাকতে পারবেন, কিন্তু আল আমিন আর মানুষ না (উনি অস্ট্রেলিয়া এসে মেলবোর্ন
আর ব্রিসবেনে জুয়া খেলার আসরে ছিলেন এটা নিশিচত থাকতে পারেন, বাকিগুলো জানিনা)। ওই একই আসরে সাকিব কে দেখলাম ব্রিসবেন থেকে গোল্ড
কোস্টে ঘুড়ে বেড়াতে এখকানকার বাংলাদেশি ছাত্রদের সাথে। তখন দোষ হয় নাই? রুবেলের এত
বড় কেলেঙ্কারি ও কিন্তু তাকে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে বাধা দেয়নি। তাহলে আবারো একই কথা,
আল আমিন ছেলেটা কালা, দেখতে ভুতের মত, গাইয়া, এবং ভাত পাগল। এগুলোই অনেক বড় অপরাধ ছিলো।
পাপন গঙদের দায়িত্ব ক্রিকেট ম্যানেজ করা। ক্রিকেটে স্বৈরতন্ত্র
কায়েম করা না। উনার কাজ রুবেল বা নাসিরের বেডরুম পাহারা দেয়া না। ৩৪ বছরের রুবেল (আরেক
রুবেল) ৮ না ১০ বছর পরে দলে সুযোগ পায়, কিন্তু ২৪ বছরের নাসির পায় না। বাংলাদেশের মানুষের
কষ্টে জমানো টাকা দিয়ে উনি নিজের ব্যক্তিগত ক্ষোভ উপহার দিবেন জাতিকে আবার দম্ভ ভরে
বলবেন যে কার বদলে নাসির কে দলে নিবো? নাসির একটা উদাহরন মাত্র, যেটা ঘটনাচক্রে সামনে
চলে এসেছে। আমরা কেউ ই জানিনা এইরকম আরও কত আছে পর্দার পিছনে।
যাকগে, আজকে আসলে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড এর দ্বিতীয় ম্যাচের কথা
বলতে চেয়েছিলাম। এই ম্যাচে নাসির খেলেছে অনেকটা দেশব্যাপী ওকে নিয়ে আলোচনার কারনে।
সে ভাল করেছে বলে এই যাত্রায় বেচে গেলো। কিন্তু কিছু ব্যাপার লক্ষণীয়। নাসির কে কাল
আসলে কোনো বিপদে ফেলার চিন্তা ছিলো কিনা টিম ম্যানেজমেন্টের?
নাসির একমাত্র বাংলাদেশী বোলার যে এই ম্যাচে ১০ ওভার বল করেছেন।
ম্যাশ নিজেও করেন নি ১০ ওভার যদিও সে খুব সফল হচ্ছিলো বল হাতে এই ম্যাচে। এবং নাসির
একটানা ১০ ওভার বল করেছেন। আমি কি ধরে নিবো যে নাসির কখন পিটানি খাবে সেই অপেক্ষায়
ছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট? উইকেট দরকার ছিলো, মোসাদ্দেক এক ওভার বল করে এক উইকেট পেয়ে
গেলো। ওরে কিন্তু আর আনা হয়নি। কিন্তু নাসির বল করেছেন একটানা। পিটানি খায়নি, ওর কপাল
ভাল, যদি খেত তাহলে নাসির তো এক চান্সে স্থায়ীভাবে দলের বাইরে চলে যেতো। পানি টানার
সুযোগ ও হয়তো থাকত না। এবং পাপন এর হেভভি মাসল টাইপের মুখ থেকে আমরা আবার কিছু আবর্জনা
বের হতে দেখতাম।
কাল নাসিরের কপাল সেইরকম ভাল ছিলো। শেষ যেই উইকেট নিয়ে মানুষ
যখন আবার প্রথম ম্যাচ কে স্বরন করা শুরু করেছিলো, খোদার কুদরতে ওটাতেও নাসিরের নাম
জড়িয়ে গেলো। ম্যাশ কি কোন প্রেসারে ছিলো নাসির কে নিয়ে? আমি ম্যাশকে সন্দেহ করছিনা,
কিন্তু সে নিজেও পরিস্থিতির স্বীকার হতে পারে। ম্যাচের পরে ম্যাশকে নাসির সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করা হলে সে সরাসরি উত্তর দেয়নি। সে বরং নাসিরকে নিয়ে করা প্রশ্নে রিয়াদকে নিয়ে
উত্তর দিয়ে নাসির সম্পর্কে এক লাইন বলেছে। এটা দেখেই মনে হচ্ছে যে নাসির রে নিয়ে কেউ
কিছু বলতে চায়না। পাছে পাপনের মাসল দেখতে হয় ! আমার অনুমান মিথ্যা হোক আমি নিজেই তা
চাই। তবে যদি সত্যি হয়, ম্যাশ নিজেও একটা জুয়ার অংশ হয়ে গেলেন !
এই ম্যাচে অন্তত পাপনের মুখে তালা লেগে গেলো। কিন্তু এই তালা
কয়দিন যে লেগে থাকবে আমার সন্দেহ আছে। আমি বরং ভয়ে আছি, যেসব আবর্জনা পাপন এই ম্যাচের
পরে বিসর্জন দিতে পারেন নি, তা তো উনার পেটে গ্যাস তৈরি করবে। এই গ্যাস যখন ফেটে বেরোবে
তখন তা নাসির বা অন্য কোন ক্রিকেটারকে কিভাবে ভোগাবে !
কে কতক্ষন বল করবে এটা মাঠে বসে স্বীদ্ধান্ত নেয় টিম ম্যানেজমেন্টে? সবকিছু এতো ইমোশন দিয়ে বিচার করে স্পেকুলেশন না করলেও পারেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমে যে দলাদলি আছে তাতে নাসিরের অবস্থান মাশরিফের দলে। আপনার আমার মত নাসিরের প্রতি মাশরাফির অগাধ বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস থেকেই মোশরাফিই বরং নাসির কে দিয়েই বল দিয়েছে যাতে নাসির নিজেকে প্রমান করতে পারে। নাসির কে দিয়ে প্রেসারের সময়ে বা যখন ব্যাটসম্যান পিটাচ্ছে তখন বল করানো হয়নি বরং ইংল্যান্ড যখন চাপের মধ্যে তখনই বেশির ভাগ বল করানো হয়েছে।
ReplyDeleteঅয়ন, আপনাকে ধন্যবাদ
ReplyDeleteপ্রমানের যুক্তিটাও ঠিক হতে পারে। এইজন্যই প্রথমে বলেছিলাম ম্যাশ এর কাছেই নাসিরের প্রশংসা শুনেছিলাম।
আপনি সঠিক ধরেছেন, ইমোশন আছে। তবে ইমোশনের পিছনে কিছু রেশনাল ও আছে বৈকি ! ভাল থাকবেন