Tuesday, March 29, 2016

রাষ্ট্রধর্ম এবং বিড়ম্বনা

১।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করিনা ইসলাম কায়েমের জন্য ইসলাম কে রাষ্ট্রধর্ম করার দরকার আছে। বরং এতে যারা মুসলিম না তাদেরকে অস্বীকার করার একটা প্রবণতা আছে। সেটা কতটা ইসলামিক আমি সেই সম্পর্কে জানিনা। তাই আমি ধর্ম নিরপেক্ষতার পক্ষে সবসময়। আমার মনে আছে নবীজি যখন মক্কার সাথে চুক্তি করেছিলেন তখন মক্কানরা উনাকে নবী মানতে নারাজ ছিলেন এবং উনার নামের সাথে উনি যে আল্লাহ এর রাসুল সেই অংশ বাদ দিতে বললেন। নবীর সাথীরা সেটা মানতে নারাজ ছিলেন এবং এক পর্যায়ে নবী নিজেই ওই অংশ কেটে দিয়েছেন। তো এখান থেকে কি শিক্ষা পাওয়া যায়?
২।
একটা রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কোন ধর্ম থাকলেই সেই রাষ্ট্রটা নষ্ট হয়ে যায় এমন কোন কথা নাই। পৃথিবীতে ৩০ বা তার চেয়ে কম দেশ আছে যাদের রাষ্ট্রধর্ম নাই। তাছাড়া বাকি সবারই তা আছে। তো এইসব দেশগুলোতে কি সংখালগুরা থাকেন না? থাকেন এবং বহাল তবিয়তেই আছেন। কেমনে বুঝলাম? নিজের অভিজ্ঞতা তো আছেই। তাছাড়া এখন অনেক কে দেখছি ওইসব দেশে বসে ফেসবুক ফাটিয়ে ফেলতে বাংলাদেশে কেন ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হলো তা নিয়ে। উনারা পারলে দেশে এসে দেশের সবাইকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিয়ে যান। এমনভাবে কথা বার্তা বলেন যে মনে হয় এই দেশে কোন মানুষই থাকেন না; সব জানোয়ার থাকেন। এরা দেশে থাকতে বা দেশে আসলে বুক ফাটে তো মুখ ফুটেনা এইরকম আচরন করেন আর বিদেশে গেলে মুখ ফুটিয়ে দেশের মান সম্মানের বারটা বাজান। আজীবস সব চিড়িয়া এগুলো। কয়দিন আগে এই রকম এক পিস রে দেখলাম জার্মানি বসে ঢাকায় প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার আমন্ত্রন জানাতে। এদের কাছে সবিনয় আবেদন, দয়া করে বাংলাদেশ কে মাফ করে দেন। আপনাদের মত 'বাইরে বাঘ, ভিতরে বিড়াল' টাইপের মানুষদের বাংলাদেশ কে নিয়ে এতো চিন্তা না করলেও চলবে। দেশটা খারাপ আছে, তারপরেও ভাল আছি।


এইরকম পিস অবশ্য দিন দিন বাড়ছে এবং আজকাল হরহামেশাই দেখতে পাওয়া যায়। ব্রিসবেনে একাধিক বাঙ্গালীকে বলতে দেখলাম বাংলাদেশ আমাদের কি দিয়েছে? নিজ কানে শুনেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো। যেই লোক বাংলাদেশের আলো বাতাসে বড় হয়ে আজ অস্ট্রেলিয়াতে পিএইচডী করতে গিয়ে এই ধরনের কথা বলতে পারে, তার মত লোককে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে ভুল করেছে বলেই আমার মনে হয়।
৩।
আরেকটা প্রজাতি আছে যারা বারবার বলছে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হয়েছে, এখন কি চুরি থামবে, ধর্ষন থামবে, রিজার্ভ এর ফেরত যাওয়া টাকা ফিরে আসবে, বা তাসকিন কি ফিরে আসবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাইরে, কোথাকার পানি কোথায় নিয়ে যান? ইসলাম কে রাষ্ট্রধর্ম করার সাথে এগুলোর সম্পর্ক কি? খালি খালি কেন মানুষের মধ্যে কনফিউশন তৈরি করেন? আপনার হয়তো অনেক ভক্ত আছে, আপনি এইরকম দায়িত্বহীন লিখার পরে যদি আপনার ভক্তরা তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দায়িত্বহীন আচরন করলে তার দায়িত্ব কি আপনি নিবেন? তাছাড়া আপনার কি মনে হয়না আপনি ইসলাম ধর্মের উপড় একটু বেশিই নির্ভর করছেন সেইসব মানুষের জন্য যারা এখনো ঠিকমত ইসলাম কে বুঝেই না? আবার, অমুসলিমদের দ্বারা কৃত অপরাধগুলোর তাহলে কি হবে? নাকি আপনি বলতে চাইছেন যে অপরাধ শুধু মুসলিমরাই করেন?


তাই চলুন বাস্তবে আসি। ধর্মকে ধর্মের জায়গায় রাখি। অন্যায়কে অন্যায়ের জায়গায় রাখি। নিজের ধর্ম নিজের মত করে পালন করি এবং সকল অন্যায়ের ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে প্রতিবাদ করি।

Thursday, March 17, 2016

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ এবং আমাদের আবেগ

যখন সারা পৃথিবীর এখানে সেখানে টাকা হ্যাক হচ্ছে এবং হ্যাকিংটা যুগ যুগ পুরানো ব্যাপার, সেখানে একজন গভর্নর এই জিনিসটা ধাক্কার সাথে নিবেন এবং তাও আবার ঘটনা ঘটার পরে, এইটা মনে হয় এক ধরনের দায়িত্বে অবহেলাই। কারন আমি যতটা বুঝি ঘটনা ঘটার পরে অবাক হবার পরিবর্তে উনার দায়িত্ব নেয়ার পরেই এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল। প্রশ্ন আসতে পারে, উনি ব্যবস্থা নিলেও কি এইরকম হতে পারতোনা? হতে পারতো, কিন্তু তখন উনাকে হয়তো ব্লেম নিতে হতনা। উনার লেখা পদত্যাগপত্র পড়ে বুঝা যাচ্ছে উনি খুব অবাক হয়েছেন এবং পুরো ব্যাপারটা বুঝতেই উনার সময় লেগেছে। এইটাকে উনার কাছে জঙ্গি হামলার মত মনে হয়েছে। ব্যংকিং সেক্টরের অতি পুরনো একটা রোগকে বুঝতে উনার এতো সময় লেগেছে - -  এইটা এক ধরনের ব্যার্থতার মধ্যে পড়ে বৈকি। উনার দ্বিতীয় ব্যার্থতা হলো উনি প্রশাসনকে জানিয়েছে দেরি করে। এইটা ঠিক ডেকোরামের মধ্যে পড়েনা। আপনার বস যতই অপদার্থ হোক, সে আপনার বস। আপনার বস অপদার্থ হলে আপনার আসলে দুটা দায়িত্ব থাকেঃ বসকে জানানো এবং বস যাতে অপদার্থের মত কোন স্টেপ না নেয় সেটা এনসিউর করা। উনার এখানে সমস্যা ছিলো এবং সেটার মূল্যই উনাকে দিতে হলো। প্রশ্ন আসতে পারে আমাদের দেশের রাজনীতি খারাপ। ট্রাস্ট মি, পৃথিবীর কোন দেশেই এই রাজনীতি নামক জিনিসটা ভালো না।

উনার পদত্যাগ? আমার মতে উনার আগেই পদত্যাগ করা উচিৎ ছিলো। এবং সেটা স্বেচ্ছায়ই হওয়া উচিৎ ছিল। অনেকে অমত করবেন, তবে পদত্যাগটা যে স্বেচ্ছায় হয়নাই এইটা মনে হয় বুঝা যায় সহজেই। আমার ধারনা উনি পদত্যাগ হয়তো করতেন আগে বা পরে, তবে আরেকটু সময় নিতেন পুরো ব্যাপারটা নিয়ে। আমার বিরক্তি লাগছে উনার পদত্যাগ নিয়ে মানুষের আলোচনার টপিক দেখে, উদাহরনঃ চোখের পানি, দেশপ্রেমিকের শাস্তি, শেখ মুজিব, এবং আরও কত কি। ভাইরে, এখানে শেখ মুজিবের কিছু করার নাই। একজন গভর্নর চলে যাচ্ছেন পরিস্থিতির কারনে সেটা নিয়ে চোখের পানি ফেলারও কিছু নাই। উনি যোগ্য ছিলেন বলে উনাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এই কথা উনি নিজেও কোনদিন বলেন নি যে উনি সব কাজে যোগ্য। তাই উনার চলে যাওয়াটা একটা দুর্ঘটনা। কান্নাকাটি বাদ দিয়ে ভালো করে খোজ করলে হয়তো যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার চেয়ে ভালো গভর্নর পেতে পারতো বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ছোট বাংলাদেশেরও কিছু লোকজন আছে যারা নিজের যোগ্যতায় হার্ভাড বা অক্সফোর্ড থেকে পড়ে এসেছেন বা এখনো ওখানে চাকরি করছেন। কান্নার বদলে একটু ভালো করে খোজ করলেই দেশের ভালো হতো।

দেশপ্রেম? আমি একমত উনার মত স্মার্ট গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক এরা আগে কতজন পেয়েছে সন্দেহ আছে। কিন্তু তাই বলে উনার দেশপ্রেম শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি দিয়ে পরিমাপ না করি। উনার দেশপ্রেম পুরো দেশের জন্য এবং আমি নিশ্চিত উনি যেখানেই থাকুন না কেন দেশকে সার্ভ করবেন। আরও একটা ব্যাপার হল, উনার দেশপ্রেম নিয়ে কথা বলা সহজ, কারন উনাকে নিয়ে আমরা যার উপড় ক্ষোভ প্রকাশ করছি সে একটা অপদার্থ। কিন্তু সবাই যদি আমরা দেশপ্রেমিক হতাম তাহলে একজনের দেশপ্রেম নিয়ে এমন হই চই করতে হতনা আমদের।

Friday, March 4, 2016

সাকিব অধ্যায় এবং আমাদের প্রেম


প্রথমেই বলে নেই আমি ক্রিকেটার নই, ক্রিকেট বুঝিওনা ভাল করে। তবে অতটুকু বুঝি বৈকি যতটুকু বুঝলে ফ্যান হওয়া যায়। তো সেই বিচারেই আমার মতামত। মন্তব্য করার আগে দয়া করে আমি যে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ নই সেটা মনে রাখবেন।

সাকিব আল হাসান আমাদের ক্রিকেটের অতি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার অবদানও কম নয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে। সবদিক বিবেচনায় নিকট অতীতে, আমার মতে, বাংলাদেশের কেউই তার সমকক্ষ ছিলোনা। তবে এখন আমি মাশরাফিকে সাকিবের চেয়ে এগিয়ে রাখবো। মাশরাফি এখন আমাদের ক্রিকেটের brand ambassador. তরুন প্রজন্ম ক্রিকেটার হবার প্রেরনা মাশরাফির কাছ থেকে বেশি বই কম নিচ্ছে বলে আমার মনে হয়না। মজার ব্যাপার হলো মাশরাফি দিন দিন যতটা ভদ্র হচ্ছে সাকিব ততই তার উল্টো দিকে হাটছেন। গত কয়েক বছরে উনার আচার আচরন বিবেচনায় আনলে  উনাকে মানুষ হিসেবে কোনভাবেই তরুন প্রজন্মের জন্য আদর্শ বলা যাবেনা। একজন মানুষ তখনি প্রকৃত মানুষ হতে পারে যখন বড় হবার সাথে সাথে সে ছোট হয়। সাকিবের মধ্যে আমি সেটা দেখিনা, অন্তত ক্রিকেট মাঠে। শচীন বা লারা কে কোনদিন এইরকম ব্যবহার করতে দেখিনি। লারার কথাবার্তা দেখলে নিজেকে আরও বেশি ভদ্র করার প্রেরনা পাই। এতবড় ক্যারিয়ারে লারা বা শচীনের কয়টা স্ক্যান্ডাল আছে? সাকিব আমাদের ছোট দেশের বড় তারকা, তার খতিয়ান লারাদের সাথে তুলনা করলে লজ্জাই পেতে হবে।  আমার মনে হয় উনি কম শাস্তিই পেয়েছেন; এইটা আশা করছি বাংলাদেশের জন্য সুখবর হবে ফাইনালের দিন। আইসিসির একটা অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোডে পড়ার কারনে শাস্তিটা কম হয়েছে। তবে এটার এই মানে করবেন না প্লীজ যে আমি চাইনা সাকিব ফাইনাল খেলুন।

তারপরেও আজকের লেখায় আমি আসলে সাকিবের আচার ব্যবহার নিয়ে বলতে চাচ্ছিনা। বরং আমি আমাদের আচার আচরন নিয়ে কথা বলতে চাইছি। আমরা একধরনের আলট্রা ইজমে ভুগছি। যারা সাকিবের এইরকম আচার আচরন এবং বাজে পারফরমেন্সে বিরক্ত তারা তাকে যা ইচ্ছে তা বলছেন, গালাগালিও করছেন। আমি বুঝিনা একজন মানুষকে পছন্দ না করলেই তাকে গালি দিতে হবে কেন? এটা খুবই অন্যায় এবং highly demotivating. আমি একজনকে অপছন্দ করতেই পারি, কিন্তু তাকে অপমান বা অসম্মান করার অধিকার আমি রাখিনা। ফ্রিডম অফ স্পীচ অন্যের বিরুদ্ধে যা তা বলার অধিকার দেয়না। সাকিবদের এইরকম গালাগালি করার মাধ্যমে আমরা আমাদের কাপুরুষতার পরিচয় যেমন দিচ্ছি তেমনি অন্যদেরও এক্সট্রিম করে তুলছি।

এইবার মুদ্রার অপর পিঠে আসি। মুদ্রার এই পিঠে আছেন সাকিবের সমর্থকরা। উনাদের দৃষ্টিতে সাকিব মেসিয়াহ। তার কোন ভুলই ভুল না। উনারা সাকিবের এইসব বর্জনীয় আচরণকেও নিন্দা জানাতে অনিচ্ছুক। বরং কেউ সাকিবরে নিয়ে কিছু বললেও উনাদের মারাত্মকভাবে লাগে এবং তার উপড় হুমড়ি খেয়ে পড়ে। উনারা সাকিবরে ছেলেমানুষ হিসেবে দেখেন। কিন্তু তাকে আবার আইডল হিসেবেও উপস্থাপন করেন। কেউ সাকিবের দোষগুলোকে ভদ্রভাবে উপস্থাপন করলেও সাকিব সমর্থকদের আচরন বিশ্রী পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। সমর্থকরা অস্বাভাবিক আচরন করেন এবং  মাঝে মাঝে অকথ্য গালিগালাজও করেন। তাই, আমার দৃষ্টিতে এই লোকগুলোর সাথে আর যারা সাকিবদের গালি দেয় তাদের তেমন বেশি পার্থক্য নাই। গালাগালি করলে সাকিবরা demotivated হয়, আর এইরকম অন্ধ সমর্থন করলে motivated হয়। কিন্তু এই motivation সাকিবদের arrogant করে তুলে, অন্তত বাংলাদেশে। আম্পায়ারকে না বলে দাদ্বশ খেলোয়াড়কে মাঠে ঢুকতে বলা, বোর্ডকে না জানিয়ে বাইরে খেলতে যাওয়া, ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে পছন্দের খাবারের জন্য অহেতুক হাজারো পাউন্ড খরচ করা, এবং আউট হয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত করা --- এই ব্যবহারগুলো কিন্তু তাই প্রমান করে।

তাই আমি মনে করি গালাগালি যেমন বন্ধ করা উচিৎ, তেমনি সাকিবকে এইরকম অদ্বিতীয় ভাবে উপস্থাপনটাও বন্ধ হওয়া উচিৎ। কারন আলট্রা কোনকিছুই ভালনা। যারা আমার সাথে একমত নন, তাদেরকে নিচের এই ভিডিওটা দেখার অনুরোধ করছি। এই ভিডিওটা ultra nationalism এর চরম নোংরা উদাহরন। তবে বলে রাখছি, এই ধরনের ভিডিও দেখতে আপনার অনেক বেশি ধৈর্য্য থাকতে হবে। প্রায় প্রায়ই আপনার মনে হবে এই লোকগুলো বর্বর। এরপরেও আমি দেখেছি, শুধু বুঝতে মানুষ কতটা বর্বর হতে পারে টকশোতে !

:: প্লেজারিজম এবং ফিডম ফাইটারস এর এস নিয়ে টানাটানি ::

 মানুষজন প্লেজারিজম নিয়ে কথা বলছে ফেসবুকে। ভালো লাগছে যে এতে যদি কারো কারো সেলফ - এস্টীম জন্মায়। চাকরির শুরুতে সব কাজ করার পরে যখন দেখতাম আর...