প্রথমেই বলে নেই আমি ক্রিকেটার নই, ক্রিকেট বুঝিওনা ভাল করে। তবে অতটুকু বুঝি বৈকি যতটুকু বুঝলে ফ্যান হওয়া যায়। তো সেই বিচারেই আমার মতামত। মন্তব্য করার আগে দয়া করে আমি যে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ নই সেটা মনে রাখবেন।
সাকিব আল হাসান আমাদের ক্রিকেটের অতি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার অবদানও কম নয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে। সবদিক বিবেচনায় নিকট অতীতে, আমার মতে, বাংলাদেশের কেউই তার সমকক্ষ ছিলোনা। তবে এখন আমি মাশরাফিকে সাকিবের চেয়ে এগিয়ে রাখবো। মাশরাফি এখন আমাদের ক্রিকেটের brand ambassador. তরুন প্রজন্ম ক্রিকেটার হবার প্রেরনা মাশরাফির কাছ থেকে বেশি বই কম নিচ্ছে বলে আমার মনে হয়না। মজার ব্যাপার হলো মাশরাফি দিন দিন যতটা ভদ্র হচ্ছে সাকিব ততই তার উল্টো দিকে হাটছেন। গত কয়েক বছরে উনার আচার আচরন বিবেচনায় আনলে উনাকে মানুষ হিসেবে কোনভাবেই তরুন প্রজন্মের জন্য আদর্শ বলা যাবেনা। একজন মানুষ তখনি প্রকৃত মানুষ হতে পারে যখন বড় হবার সাথে সাথে সে ছোট হয়। সাকিবের মধ্যে আমি সেটা দেখিনা, অন্তত ক্রিকেট মাঠে। শচীন বা লারা কে কোনদিন এইরকম ব্যবহার করতে দেখিনি। লারার কথাবার্তা দেখলে নিজেকে আরও বেশি ভদ্র করার প্রেরনা পাই। এতবড় ক্যারিয়ারে লারা বা শচীনের কয়টা স্ক্যান্ডাল আছে? সাকিব আমাদের ছোট দেশের বড় তারকা, তার খতিয়ান লারাদের সাথে তুলনা করলে লজ্জাই পেতে হবে। আমার মনে হয় উনি কম শাস্তিই পেয়েছেন; এইটা আশা করছি বাংলাদেশের জন্য সুখবর হবে ফাইনালের দিন। আইসিসির একটা অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোডে পড়ার কারনে শাস্তিটা কম হয়েছে। তবে এটার এই মানে করবেন না প্লীজ যে আমি চাইনা সাকিব ফাইনাল খেলুন।
তারপরেও আজকের লেখায় আমি আসলে সাকিবের আচার ব্যবহার নিয়ে বলতে চাচ্ছিনা। বরং আমি আমাদের আচার আচরন নিয়ে কথা বলতে চাইছি। আমরা একধরনের আলট্রা ইজমে ভুগছি। যারা সাকিবের এইরকম আচার আচরন এবং বাজে পারফরমেন্সে বিরক্ত তারা তাকে যা ইচ্ছে তা বলছেন, গালাগালিও করছেন। আমি বুঝিনা একজন মানুষকে পছন্দ না করলেই তাকে গালি দিতে হবে কেন? এটা খুবই অন্যায় এবং highly demotivating. আমি একজনকে অপছন্দ করতেই পারি, কিন্তু তাকে অপমান বা অসম্মান করার অধিকার আমি রাখিনা। ফ্রিডম অফ স্পীচ অন্যের বিরুদ্ধে যা তা বলার অধিকার দেয়না। সাকিবদের এইরকম গালাগালি করার মাধ্যমে আমরা আমাদের কাপুরুষতার পরিচয় যেমন দিচ্ছি তেমনি অন্যদেরও এক্সট্রিম করে তুলছি।
এইবার মুদ্রার অপর পিঠে আসি। মুদ্রার এই পিঠে আছেন সাকিবের সমর্থকরা। উনাদের দৃষ্টিতে সাকিব মেসিয়াহ। তার কোন ভুলই ভুল না। উনারা সাকিবের এইসব বর্জনীয় আচরণকেও নিন্দা জানাতে অনিচ্ছুক। বরং কেউ সাকিবরে নিয়ে কিছু বললেও উনাদের মারাত্মকভাবে লাগে এবং তার উপড় হুমড়ি খেয়ে পড়ে। উনারা সাকিবরে ছেলেমানুষ হিসেবে দেখেন। কিন্তু তাকে আবার আইডল হিসেবেও উপস্থাপন করেন। কেউ সাকিবের দোষগুলোকে ভদ্রভাবে উপস্থাপন করলেও সাকিব সমর্থকদের আচরন বিশ্রী পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। সমর্থকরা অস্বাভাবিক আচরন করেন এবং মাঝে মাঝে অকথ্য গালিগালাজও করেন। তাই, আমার দৃষ্টিতে এই লোকগুলোর সাথে আর যারা সাকিবদের গালি দেয় তাদের তেমন বেশি পার্থক্য নাই। গালাগালি করলে সাকিবরা demotivated হয়, আর এইরকম অন্ধ সমর্থন করলে motivated হয়। কিন্তু এই motivation সাকিবদের arrogant করে তুলে, অন্তত বাংলাদেশে। আম্পায়ারকে না বলে দাদ্বশ খেলোয়াড়কে মাঠে ঢুকতে বলা, বোর্ডকে না জানিয়ে বাইরে খেলতে যাওয়া, ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে পছন্দের খাবারের জন্য অহেতুক হাজারো পাউন্ড খরচ করা, এবং আউট হয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত করা --- এই ব্যবহারগুলো কিন্তু তাই প্রমান করে।
তাই আমি মনে করি গালাগালি যেমন বন্ধ করা উচিৎ, তেমনি সাকিবকে এইরকম অদ্বিতীয় ভাবে উপস্থাপনটাও বন্ধ হওয়া উচিৎ। কারন আলট্রা কোনকিছুই ভালনা। যারা আমার সাথে একমত নন, তাদেরকে নিচের এই ভিডিওটা দেখার অনুরোধ করছি। এই ভিডিওটা ultra nationalism এর চরম নোংরা উদাহরন। তবে বলে রাখছি, এই ধরনের ভিডিও দেখতে আপনার অনেক বেশি ধৈর্য্য থাকতে হবে। প্রায় প্রায়ই আপনার মনে হবে এই লোকগুলো বর্বর। এরপরেও আমি দেখেছি, শুধু বুঝতে মানুষ কতটা বর্বর হতে পারে টকশোতে !
No comments:
Post a Comment