Sunday, October 4, 2020

:: প্লেজারিজম এবং ফিডম ফাইটারস এর এস নিয়ে টানাটানি ::

 মানুষজন প্লেজারিজম নিয়ে কথা বলছে ফেসবুকে। ভালো লাগছে যে এতে যদি কারো কারো সেলফ - এস্টীম জন্মায়। চাকরির শুরুতে সব কাজ করার পরে যখন দেখতাম আরেকজন হাসিমুখে স্বাক্ষর করছে তখন একেবারেই মাননীয় স্পীকার হইয়া যাইতাম... আরো বড় স্পীকার হইয়া গেছিলাম যখন দুই বিজ্ঞজন একদিন ফ্রিডম ফাইটারস এর এস ধইরা টান দিয়া আমাকে কথা শুনাইয়া ঐ আরেকজনরে কইলো যে কি মিয়া তুমি এদের সুপারভাইজ করোনা?!! আমি রুম থেকে বের হয়ে অনেক হেসেছিলাম - তবে তা রাগে [ও হ্যাঁ, রাগে হাসতে পারা কঠিন, কিন্তু কাজে দেয় হেভভি]!

ব্যাপারটা ছিলো এইরকম - স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ছেলেমেয়েরা অনুষ্টান করবে এবং সেখানে দুজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আসবে তাদের কথা শোনার জন্য। একেবারেই 'সময় নাই গময় নাই, বাবু একখান টিকেট' টাইপের আবদার নিয়ে এসেছিলো পোলাপাইন যে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে তারা কনসার্টসহ বিশাল একখান অনুষ্টান করবে মুক্তমঞ্চে। এজন্য তারা আবার স্পন্সরও জোগাড়ের চেষ্টা করবে। বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছেলেমেয়েদের কোন আবদারই তেমন একটা ফেলিনি, এইটাও ফেললাম না। আর এদের উৎসাহও ছিলো দেখার মতো। তবে সবার যে ছিলো তা কিন্তু না ... এই যেমন আমি পোলাপাইনের সাথে মুক্তমঞ্চে যখন কার্পেট ফেলছিলাম তখন এদেরই কেউ কেউ আবার মঞ্চের একটু দুরে দাড়িয়ে তামাশা দেখছিলো বা সিগারেট ফুকছিলো!
অনুষদের বিজ্ঞ ও তাদের শিষ্যরাও এই পোলাপাইনের মতো তামাশা দেখছিলো এবং যতভাবে পারে এটা বন্ধ করার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু উনাদের জন্য মুশকিল হয়ে গেছিলো ব্যাপারটা মূলত তৎকালীন উপাচার্যের কারনে। আমরা উপাচার্যের কাছে গিয়ে বললে উনি সাথে সাথে অনুমতি দিয়ে বললেন যে আমি নিজেও থাকবো। এটা খুবই একটা ভালো উদ্যোগ ছিলো এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেছি যে তরুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনতে চায় এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। আমার ধারনা উপাচার্য মহোদয়ও একই কারনে সাথে সাথেই অনুমতি দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অনুষদের বিজ্ঞরা তা মানবেন কেন যেখানে আবার উনাদের আঙুল ঢুকানোর যায়গা নাই। এমতাবস্থায়, বিজ্ঞজনরা আমাকে ডাকলেন। হালকা বকাঝকা করলেন যে কেন এসব ঝামেলায় যাচ্ছি। আমি ঐটুকুকে আশীর্বাদ হিসেবে নিয়ে জানালাম যে ছেলেমেয়েগুলো রাত বিরাতে ধুমাইয়া কাজ করছে। তখনো তো এতো কিছু জানতাম না যে উপাচার্য অনুমতি দিলে আর কিছু লাগেনা... উনাদের বকাঝকার আশীর্বাদের পরে এলো আসল কাহিনী ... ছেলেমেয়েরা নিজেদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ থেকে শেখ মুজিব হত্যা মামলার বাদীকে প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন। উনি বলেছেন যে উনাকে নিরাপত্তা দিতে পারলে উনি আসবেন। মজার কথা হলো উপাচার্য সেই নিরাপত্তা দিতে রাজী হয়েছেন। তো আমরা উনাকে সহ দুজন মুক্তিযোদ্ধার কথা শুনবো প্ল্যান নিয়েই কাজ করছিলাম। কিন্তু বিজ্ঞজনদের তীব্র বাধা পেলাম বাদীর ব্যাপারে। বাধ্য হয়ে উনাকে বাদ দিলাম। কথা হলো দুজন সাধারন মুক্তিযোদ্ধা আসবেন তাহলে। এর পরে আবার সমস্যা যে মুক্তিযোদ্ধাদের এতো কথা শোনার সময় কই, একজন করে দাও। আবারো মেনে নিলাম - একজন করে নিলাম।
এখন এই একজন তো নতুন কাহিনী। স্পন্সরদের কাছে যেসব চিঠি লিখেছিলাম সব জায়গায় দুজনের কথা বলা ছিলো এবং লেখা ছিলো freedom fighters. পরে যখন একজন হয়ে গেলো চিঠি তাড়াহুড়ো করে এডিট করতে গিয়ে fighters এর S টা আর কাটা কয়নি। আমাদের বিজ্ঞজনরা তন্ন তন্ন কইরা আর কোন ভুল খুইজা না পাইয়া এই এস নিয়া আমারে এক ধাপ কইলেন... হেভভি প্রেস্টিজে লেগেছিলো, কিন্তু পোলাপাইনের দিকে তাকিয়ে কিছু কই নাই।
সেই অনুষ্টানটা শেষ পর্যন্ত হয়েছিলো। মাত্র ৮৯ দিন বয়সী একটা বিভাগ মুক্তমঞ্চে একক অনুষ্টান করেছে যাদের কারো কোন ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলোনা। জাবিতে এতো কম বয়সী কোন বিভাগ এর আগে এমনটা করেছে আমি শুনিনি। কপাল ভালো যে তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিগলির টোকাই মার্কা রাজনীতি সম্পর্কে জানতাম না। তাহলে হয়তো ভয়েই রাজী হইতে পারতাম না পোলাপাইনের কথায়!!

Saturday, September 26, 2020

অসহনীয় সংকেত

 এই যে আমি যা ইচ্ছা তা ই করতে পারি জাতীয় সংকেতগুলো ভালো না। এগুলো ইতিহাসের মধ্যে নতুন ইতিহাস তৈরি করে এবং কাউকে কাউকে একেবারেই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ফেলে দেয়। বাংলাদেশে ইতিহাসকে লালন করা পরিবারগুলো যদি ইতিহাসের শিক্ষাকে ধারণ না করে এটা তাদের এক ধরনের ব্যর্থতা। দুঃখজনক হলো এরজন্য দেশকে অনেক মূল্য দিতে হয়।

- একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার কে ভারপ্রাপ্ত ভিসি করে কি সংকেত দেয়া হচ্ছে? কাকে দেয়া হচ্ছে এই সংকেত? কারা লাভবান হবে এতে? একটা দেশের শিক্ষাখাত যেখানে এখনো নকলের মহামারি কাটিয়ে নিজেকে দাড় করাতে পারেনি, সেখানে এই খাতটি নিয়ে এসব তামাশা দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই যে আমি কাউকেই পাত্তা দেইনা, বা আমার ইতিহাসই সব, অন্য সকল ইতিহাস বা আবেগ তিস্তার পানির মতো যে থাকলে থাকলো না থাকলে নাই - এই মনোভাব একেবারেই ভালো না।

- দিনে দুপুরে খুন ধর্ষন হচ্ছে, দলীয় ছেলেরা করছে, কিন্তু বিচার হচ্ছেনা। এমসি কলেজ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বর্বর রা বর্বর ই থাকে, করোনাও এদের পরিবর্তন করতে পারেনা। কিন্তু এদের মতো বর্বররা বেঁচে যায়/যাবে দলীয় পরিচয় থাকার কারনে। সব সরকারের আমলেই তা হচ্ছে।

- ভারতকে সব খুলে দিয়ে কি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে? দেশের বারোটা বাজতে কি খুব বেশি বাকি আছে? আমার অবস্থান স্পষ্ট এখানে - কেউ যদি বাংলাদেশকে ভারতের আরেকটা রাজ্য বানাতে চায় সেটা স্পষ্টই বলা উচিৎ। অন্যথায় বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশের মতোই থাকতে দেয়া উচিৎ। বাংলাদেশের আচরণ একটা স্বাধীন দেশের মতো হওয়া উচিৎ। অবস্থান পরিষ্কার হলে দেশের মানুষের উপড় দায়িত্ব বর্তাবে তারা কি চায়, তখন মানুষই এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে। ৭১ এর শিক্ষা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে কেন? মুখে ৭১ এর ফেনা তুলে মনে মনে আইয়ুব ইয়াহিয়া পালন করলে তো হবেনা।

- শিক্ষকসহ অনেকে একটা দেশের এই মৃত্যুযাত্রায় বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন। অন্যদের নিয়ে কিছু না বললেও শিক্ষকদের দেখে আমার আফসোস হয়। আবার হয় ও না। এদের শিক্ষক হওয়াও এই মরন নাটকের নাট্যকারদের করুনা, তাই শবযাত্রায় এরা শামিল হবে এটাই স্বাভাবিক। আমি শুধু ভাবছি জার্মানির ১৯৪৫ সাল ও একইরকম ছিলো বোধকরি!!

এই কথাগুলো আমার প্রজন্ম যত সরকার দেখেছে সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শুধু অত্যাচার আর অনিয়মের তীব্রতা বেড়েছে দিনকে দিন। আমরা এখন অনেক ক্লান্ত এসব নিয়ে, এসব থেকে পরিত্রাণ চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অপমান

 [একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গ]

অবাক অনেকে হচ্ছে, আমি বাংলাদেশের শিক্ষাখাতের অসভ্যতামি নিয়ে অবাক হওয়া অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। এরপরেও এখানে একটু অবাক হলাম। এরকম একটা ঘটনা কি করে ঘটে? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ফাইলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি। এর আগে এই ফাইলে অনেক দপ্তর ঘুরে - শিক্ষা, প্রধানমন্ত্রী ইত্যাদি... কারোরই এই অসঙ্গতিটা চোখে পড়লোনা? দুটো ব্যাপার হতে পারে ... প্রশাসনে যারা কাজ করেন তারা একেবারেই অথর্ব অথবা পা থেকে মাথা পর্যন্ত মরিচা পরে গেছে!
বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন আঙ্গিকে মেশা বা কাজ করার সূত্রে বুঝতে পেরেছি সরকারি চাকুরেরা বিশেষ করে বিসিএসের মাধ্যমে যারা সরকারি চাকরিতে ঢুকেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের খুব একটা পছন্দ করেন না। এদের শিক্ষার প্রতি বিশাল ক্ষোভ, এবং কারো কারো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে না পারার ক্ষোভ! ইনারা ইনাদের কাজে কর্মে যতভাবে সম্ভব এই শিক্ষকদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হেনস্থা করতে এক পা ও পিছু যান না... কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ গিনিস বুকে নাম লিখানোর মতো একটা কাজ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটা কমিটি করেছে যেখানে একজন শিক্ষক ও ছিলেন না। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী কারোরই কোন সমস্যা দেখা যায়নি এইরকম একটা অস্বাভাবিক ব্যাপারে।
আরো কিছু গ্রুপ নিজের স্বার্থে বা হীনমন্যতায় সাগ্রহে যোগ দেন এই ঘৃণার উৎসবে। তারা কারা?
- সদ্য পাশ করে বের হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটরা। এরা বাইরে গিয়ে এক খান ১০হাজার টাকা বেতনের চাকরি জুটাইয়া নিজের থেকে ২ বছরের সিনিয়রকে বস হিসেবে পেয়ে স্যার বলতে বলতে মুখের ফেনা বের করেন, কিন্তু সুযোগ পেলেই নিজের শিক্ষকদের ধুমাইয়া গালি দেন। নিজের স্যারদের নামের পরে স্যার যুক্ত করতে ভীষণ লজ্জা পান, পাছে কেউ আবার ইনাদের ব্যাকডেটেড ভাবে। যেসব গ্রাম থেকে আসা ছেলেমেয়েদের ঠিকমতো জামাকাপড় পড়া শিখাইছি তারা এখন মূল্যায়ন করে আমাদের ... তাদের থেকে কতো টাকা কম বেতন পাই, তাদের থেকে কতোটা কম আরামের জীবনযাপন করি, আমাদের উপরি কামাই আছে কিনা বা কত এইসব দিয়ে... ব্যর্থতা আমাদের, শিক্ষা দিতে পারিনি!
- পুলিশ ও আর্মিঃ এই দুইটা গ্রুপই একধরনের মানুষ পিটানোর বিকৃত প্রশিক্ষন নিয়ে জীবনযাপন করে। নিজেরা স্বাধীন দেশে পরাধীনের মতো থাকে, কারন দুই চারজন হোমরা চোমড়া ইনাদের চালান। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানুষজন এহেন স্বাধীনতা ভোগ করবে, এই ব্যাপারটা উনারা ঠিক হজম করতে পারেন না। একবার শুধু জেনে দেখবেন পুলিশ বা আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পিটিয়ে কি মজা পায়!!
- আমাদের সবার প্রিয় রাজনীতিবিদরাঃ ইনাদের সম্পর্কে শুধু এটুকুই বলবো যে বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে ওখানকার পরিবেশ বা শিক্ষা সম্পর্কে কারোরই সম্যক বা সঠিক জ্ঞান থাকার কথা না। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক হলো, উনারা যেটা জানেন না সেটা জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যান না, যান ঐ যে সেসব মানুষদের কাছে যারা অলরেডি শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘৃনা করে...

:: প্লেজারিজম এবং ফিডম ফাইটারস এর এস নিয়ে টানাটানি ::

 মানুষজন প্লেজারিজম নিয়ে কথা বলছে ফেসবুকে। ভালো লাগছে যে এতে যদি কারো কারো সেলফ - এস্টীম জন্মায়। চাকরির শুরুতে সব কাজ করার পরে যখন দেখতাম আর...