Thursday, March 7, 2019

শিক্ষক নিয়োগ এবং অতঃপর রুপবদল


[গল্পের শুরুঃ আওয়ামী আমলে নিয়োগ পাওয়া তথাকথিত এক আওয়ামী শিক্ষকের শেখ মুজিবকে অনবরত গালাগালি দেয়া দেখা থেকে অনুপ্রেরনা নেয়া]

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দলীয় বিবেচনা কোনোভাবেই কাম্য নয়, অন্তত একটা সুস্থ্য সমাজ তৈরির জন্য। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দলীয় বিবেচনাই মাঝে মাঝে প্রধান যোগ্যতা হয়ে দাঁড়ায়। আরো একটা ব্যাপার আছে ‘বিশেষ যোগ্যতা’। এই অসজ্ঞায়িত বিশেষ যোগ্যতা যে কি জিনিশ বা এটার যে কতো ধরন আছে তা কেউ বলতে পারে কিনা আমি জানিনা। আমার কিছু অভিজ্ঞতা লিখতে ইচ্ছে করলো আজ ...


  • বিশেষ যোগ্যতা আমার জানামতে পজিটিভ কিছু বোঝাতো। কিন্তু চাকরি করতে এসে বুজলাম নীতিনির্ধারকেরা এটাকে নিন্মগামী করে রেখেছেন।

  •  বিশেষ যোগ্যতায় সেকেন্ড ক্লাস পাওয়া কাউকে নিয়োগ দেয়া হয় প্রথম শ্রেনীতে প্রথম কে বাদ দিয়ে

  • বিশেষ যোগ্যতায় নিয়োগ দেয়া হয় এমন কাউকে যে কিনা বিভাগে থিসিস করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি
  • বিশেষ যোগ্যতায় নিয়োগ দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে

দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া কিছু লোকজনের সাথে আমার কথা বার্তা হয়েছিলো বিভিন্ন সময়ে। যখন হলে ছিলাম একজনকে চিনতাম যিনি নিজের ইসলামী চেতনার কারনে তার দল বিএনপির সাথে জোট করলেও যে বিএনপি প্রার্থীকে ভোট দেয়নি। আমি দেখেছি উনাকে উনার বন্ধুবান্ধবরা অনেক চেষ্টা করেও রাজী করাতে পারেনি বিএনপিকে ভোট দিতে। তো ইনি যখন শিক্ষক হলেন, আওয়ামী সময়ে আওয়ামী ব্যানারে, উনি আওয়ামী বড় নেতা হয়ে গেলেন। আমি নিয়োগ পাবার পরে উনার নিয়োগ দেখে অবাক হয়েছি, খোজ নিয়ে শুনলাম আওয়ামী বড় নেতার প্রবল সুপারিশে নিয়োগ। অবাক হয়েছি। কিন্তু যখন দেখলাম উনি আওয়ামী বড় নেতা, তখন চুপ হয়ে গিয়েছি – কষ্ট করে আর অবাক হইনি। উনি আমাকে দেখে প্রথম প্রথম মনে হয় একটু লজ্জা পেতেন, বাকিটা ইতিহাস, রাজনীতির ইতিহাস। দেখতে দেখতে এইরকম আরো বেশ কয়েকজন যোগ হলো তালিকায় ...  আমার কি আর কাজ নাই যে বার বার অবাক হবো? মজা লাগা শুরু হলো ... মজা লাগাটা বাড়লো যখন দেখলাম নিয়োগ পাওয়ার এক বছর বা দেড় বছর পরেই কিছু লোকজন স্বরুপে ফিরা শুরু করলো...

  • আলাপ করছিলাম ইনাদের কারো কারো সাথে। একজনের বক্তব্য ‘কতো আর দমবন্ধ করে রাখা যায়, পুরনো অভ্যাস তো’। জিজ্ঞেস করলাম যে তাহলে আওয়ামী ভাব নিচ্ছেন কেনো? বুঝালেন উপায় নাই... যে সরকার ক্ষমতায় থাকে এটাই রেওয়াজ। বিএনপি থাকলেও একই চিত্র থাকতো। একজন আমাকে বুঝালেন উনি কি করে কোন সরকার ক্ষমতায় থাকবে উনি বের হবার সময়ে তা আন্দাজ করে নিজের রাজনৈতিক দল ঠিক করেছেন... নিজেকে বেক্কল মনে হয়েছে উনার তুলনায়। আবার মনে হয়েছে যে বাপ মায়ের দোয়া প্রবল ছিলো মনে হয়, চাকরি একটা পেয়ে বেচে গেছি।

কিছু মানুষকে দেখেছি নিয়োগের আগে আওয়ামী বন্দনায় মুখে ফেনা তুলতে। বেশি ভক্তিতে তো একটু সন্দেহ হয়ই। নিজেকে সংযত রেখেছি যে আমার নিচুমন বলে কথা। কিন্তু আমার নিচুমন উচু হতে সময় লাগেনি উনার আচরনের রুপ বদল দেখতে দেখতে।

  • কথা হলো কেন এমন করছেন ইনারা? ইনারা ভালো ছাত্র/ছাত্রী। চাকরি তো হবেই; আজ না হলে কাল।
  • আর যদি আওয়ামী বন্দনা করেই চাকরি নেন, তাহলে আওয়ামী বন্দনা বাদ দিলেও এমন কিছু কইরেন না যাতে অন্যদের চোখে আপনার সম্মানটা কমে যায়। সবাইকে গাধা মনে করা তো ঠিক না, তাইনা। আপনি হয়তো ভাবছেন, বাপ রে ৬ মাস হয়ে গেছে, এখন কি আর মানুষের মনে আছে আমি আওয়ামী বন্দনা করেছি, এইবার খোলস থেকে বেরিয়ে আসি। বাকি সবাই ই তো আপনার মতো মেধাবী বলেই চাকরি পেয়েছে। তাদের মেধাকে অবমূল্যায়ন করে কি লাভ? মানুষ বরং আপনাকেই খারাপ চোখে দেখে। আমি মনে করি, আপনি ভালো ছাত্র/ছাত্রী, চাকরি আপনি ডিজার্ভ করেন, আপনার এতো দলীয় আনুগত্য না থাকলেও হয়। থাকুন না আপনি শিক্ষক হয়ে, নিজের গাটস নিয়ে; ভাবুন না একাডেমিক বিষয় নিয়ে।

এই যে এতো কিছু হচ্ছে, এতো পরিবর্তন হচ্ছে, আমি একটা বিনোদন থেকে বঞ্ছিত। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আমাদের নিয়োগ কর্তাদের কেমন লাগে এইসব পরিবর্তন দেখতে। উনাদের ফিলিংসটা কেমন হয়? নিয়োগ কর্তাদের অনেক কে দেখেছি অনেকবার দেখিয়ে দেয়ার পরেও আজীব আজীব নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগ বা অনুষদ ধংস করতে। উনাদের সাধারন জ্ঞানের এতো অভাব থাকে নিয়োগের সময় উনারা ভুলেই যান যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিটি কর্পোরেশন না। মাঝে মাঝে ইনাদের ইগো এত বড় হয়ে যায়, একটা পুরো বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ১০-২০ হাজার ছেলেমেয়ের জীবন নিয়ে প্রত্যহ কাজ করা হয় সেটা উনাদের ইগোর তুলনায় ধুলিকনা হয়ে যায়। ইনারা বুজতেই চায়না যে একটা বিভাগে একটা বাজে নিয়োগই যথেষ্ট ঐ বিভাগটাকে ধংস করার জন্য; ঐ বিভাগটাকে ৩৫-৪০ বছর পিছিয়ে দেয়ার জন্য।

আমাদের শিক্ষাঙ্গন একটা দুষ্টচক্রে বাধা পড়ে গেছে। আমি অন্তত দেখিনা নিকট ভবিষ্যতে আমরা এখান থেকে বের হতে পারছি।


:: প্লেজারিজম এবং ফিডম ফাইটারস এর এস নিয়ে টানাটানি ::

 মানুষজন প্লেজারিজম নিয়ে কথা বলছে ফেসবুকে। ভালো লাগছে যে এতে যদি কারো কারো সেলফ - এস্টীম জন্মায়। চাকরির শুরুতে সব কাজ করার পরে যখন দেখতাম আর...