পিএইচডি শেষ করার আগে আমার চাকরির বয়স ছিলো নয় বছর। বিভিন্ন কারনে নয় বছরের শিক্ষকতায়
সাধারনত যা যা দেখা/শেখা যায়, আমার ভাগ্যে তার চেয়ে বেশিই জুটেছিলো। আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু আমি তখনো জানতাম না পিএইচডি শেষে জয়েন করার পরের দুই মাসের অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা
আগের নয় বছরকে ছাড়িয়ে যাবে। মানুষ (আমিসহ) এক বিচিত্র প্রাণী – এটা জানতাম তো বটেই।
তবে ঐ দুই মাসের অনুধাবন সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
-
ছোটবেলায় পড়ালেখায় ভালো ছিলাম বলে স্যারদের অনেক স্নেহ পেয়েছি। সব স্যারদের একই
কথা ছিলো যে মানুষ হতে হবে, তারপরে বাকি সব। একেবারে গেথে গেছে মনের মধ্যে যদিও এখনো
ভালো মানুষ হতে পেরেছি বলে মনে হয় না। ভালো মানুষদের সঙ্গ ভালো লাগতো এবং এখনো লাগে।
নিজের থেকে ভালো মানুষ পেলে তাদের মতো হতে চেষ্টা করতাম, তাদের সাথে মিশার চেষ্টা করতাম;
এখনো তা করি। এতে করে আমার ঘনিষ্টজনের সংখ্যা একেবারেই কম, হাতেগোনা। ঘনিষ্টজনদের মধ্যে
যেমন আছে সমবয়সী তেমনি আছে বড়রা এবং ছোটোরা।
-
এই দুই মাসে কিছু বড় ভাইদের নতুন করে চিনলাম অথবা তাদের আসল চেহারা এতদিনে বুজতে
পারলাম। আমি বোকা টাইপের মানুষ, তাই মানুষকে দ্রুত বিশ্বাস করে ফেলি। লেবু স্যার এর
কথা মনে পড়ে; স্যার বলেন যে মানুষকে বিশ্বাস করতেও যদি এতো চিন্তা করতে হয় এটাতো বড়
মুশকিল তরিকুল। তাই আমিও স্যারের মতো বিশ্বাস করে ফেলি এবং পরে মন খারাপ ও করি। তবে
এবার মন খারাপ হয়নি; প্রেরনা আবারো সেই লেবু স্যার। স্যার বলেন যে মানুষের জন্যই মন
খারাপ করা যায়, অমানুষের জন্য তা কেন? তাই এইসব বড় ভাইদের জন্য মনে এক বালতি করুনা
জমা করে রেখেছি। এটা ঠিক যে উনাদের mean mentality উনারা আড়াল করতে পারেন বটে; ইনাদের মুখে জোর আছে; ইনারা এমনভাবে কথা বলেন যে প্রগতি আছড়ে
পড়ে মুখ খুললেই। তবে আমি যেহেতু জানতে পেরেছি, বাকিরাও জানবে, কারন আমার অভিজ্ঞতা বলে যে বেশিরভাগ
মানুষই আমার থেকে স্মার্ট।
-
ছোটরাও কম যায় না। অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরার পরে আমার স্ট্যাটাস ছোটদের কাছে
এক ঝটকায় অনেক নিছে নেমে গেছে। হায়রে আমার বিদেশপ্রেমী ছোটরা! যে ছোটরা দপ্তাহে দুই
চারবার নক করতো, প্রায়ই কল দিতো ফেসবুকে, তাদেরকে এখন ফেসবুকে নক করলে রিপ্লাই
ও দেয় না; এমনকি মেসেজ সিন করার পরেও। অবাক হয়েছি।
বাই দ্য ওয়ে, ইংল্যান্ড এ আসার পরে মনে হচ্ছে স্ট্যাটাস
আবার বেড়েছে!! এনজয় করছি কিন্তু! বিশাল বিনোদন!
এই বড় এবং ছোটদের মধ্যে এক জায়গায় খুব মিল। ইনারা নিজেরাই শুধু সম্মান চান, অন্যকে সম্মান যে করা যায় বা করতে হয়
বা অন্যরাও যে কিছু সম্মান ডিজার্ভ করে এই concept টা ই উনাদের মগজে স্থান পায় নাই। নিজের
কিছু দরকার হলে তা নির্লজ্জের মতো চেয়ে নেয়, কিন্তু অন্যকে কোন বিবেচনায়ই রাখে না।
অন্য মানুষ যখন ভুল করে, ছোট ভুল হলেও, তা নিয়ে ইনারা দুনিয়া মাতিয়ে তুলেন
যে কি অসভ্য রে বাবা, কিন্তু উনাদের সাথে কাজ করলে দেখা যায়
ইনাদের মধ্যে সামান্যতম ভদ্রতাবোধ বা সভ্যতা নাই। ইনাদের অসভ্যতামিগুলো এমন পর্যায়ের
যে ইনাদের মধ্যপ্রাচ্যের রাজাদের মতো মনে হয় যারা বাকি সবাইকে মানুষ মনে না করে দাস
ভাবে। ... [চলবে]