আমার ব্যক্তিগত মতামত হল যে 'কোন বিশেষ ধরনের সুবিধা' বাংলাদেশের জন্য উপযোগী নয়। এই যেমন মুক্তিযোদ্ধা কোটা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসীম সম্মান আছে, কিন্তু তাদের কোটা নিয়ে বাংলাদেশে যা করা হলো বা হচ্ছে তা দেখলে উনারা দেশটাকে স্বাধীন করতেন বলে আমার মনে হয়না। কারন মুক্তিযোদ্ধা কোটা যদি হয় অযোগ্যদের যোগ্য করে তোলার হাতিয়ার এবং যোগ্যদের ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলার প্রধান অস্ত্র, এর চেয়ে বড় পরাধীনতা আর কি থাকতে পারে একটা স্বাধীন দেশে? সম্মানটা আসলে মুক্তিযোদ্ধাদেরই দেয়া উচিৎ ছিলো। উনাদের দিকে তাকিয়ে উনাদের পুত্র/কন্যাদের বিচরণ এমন অবাধ করার কোন দরকার ছিল বলে মনে হয়না। আজ সকালেই পত্রিকায় দেখলাম অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন তার এক অত্যন্ত বিখ্যাত কলিগের ছেলে বলে যাকে জাবিতে নিয়োগ দিয়েছিলেন তার নাম আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঋনখেলাপির তালিকায় আছে।
তো আপাত সব সম্ভবের এই দেশে সিলেকশন গ্রেড জিনিসটা আরেকটা বৈষম্য তৈরির হাতিয়ার বই আর কিছুই নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা বলছি। সিলেকশন গ্রেড এর প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রাজনীতির নোংরা খেলা। ব্যতিক্রম আছে বৈকি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ এবং পদোন্নতি নিয়ে যেসব রাজনীতি হয় তারই সবশেষ ধাপ হলো এই সিলেকশন গ্রেড। কেউ কেউ PhD নিয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান আবার কেউ কেউ কোন ধরনের যোগ্যতা পুরন না করেই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান - - এইসব নজির কিন্তু আশেপাশে তাকালেই দেখা যায়। আর সরকারি দলে না থাকলে পদন্নোতি নিয়ে যেসব হয়রানি হয় তা আর কি বলবো !! তাই সিলেকশন গ্রেড না থাকাটাকে আমি মন থেকে অভিবাদন জানাই। যোগ্যতার ভিত্তিতে নয় বরং বয়সের ভিত্তিতে কিছু মানুষকে খালি খালি ই ব্রাহ্মণ বানিয়ে দিয়ে পুরা কমিউনিটিতে একটা বিভেদ তৈরি করা হয় সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে। অনেক যোগ্য এবং মেধাবী শিক্ষকদের দেখেছি অবসরে চলে যাচ্ছেন কিন্তু সিলেকশন গ্রেড পাননি, অথচ উনার চেয়ে অনেক কম যোগ্যতার শিক্ষক তা পাচ্ছেন !
আমি যতটা বুঝতে পেরেছি এই বিভেদ তৈরিকারী অস্রটিকে পূনর্বহাল করার জন্য সাধারন শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন না। উনারা সম্মানের জন্য আন্দোলন করছেন। একটা স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের জন্য আন্দোলন করছেন। কিন্তু আন্দোলনের তথাকথিত নেতাদের দাবিদাওয়া আজকাল শুধুই সিলেকশন গ্রেড আর লোন সুবিধা নিয়ে। আমি বুঝে পাইনা এরা নেতা হয় কি করে? এদের সাথে তো সাধারন শিক্ষকদের কোন কানেকশনই নাই !! এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। অন্যদিকে সাধারন শিক্ষকরাও মুখে তালা মেরে বসে আছে যতটুকু মানসম্মান অবশিষ্ট আছে সেটুকুও হারানোর জন্য। এটাও কম লজ্জার নয় !!