খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে জয়েন করেছিলাম অনেকগুলো কারনে। কারনগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো বিভাগের প্রথম শিক্ষক হতে পারা। একটা অনুভূতি ছিলো যে নতুন বিভাগ, আমি প্রথম শিক্ষক, অনেক কিছু করতে পারবো। কি করতে পেরেছি জানিনা, তবে কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। আজকে ক্লাসরুম নিয়ে বলি।
ক্লাসরুম ছিলোনা
একটাও, তাই বিকেলে যখন সবাই চলে যেতেন আমরা তখন ক্লাস করতাম। একদিন অর্থনীতি বিভাগের এক রুমে ক্লাস নিচ্ছিলাম। বিকালেই। বুঝতে পারিনি, আসলে ভাবিনি যে এই ভর বিকালে অর্থনীতির কোন স্যার ক্লাস নিবেন। expectation
এর বিপরীতে একজন senior চলে আসলেন ক্লাস নিতে। senior এর সাথে অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক এবং উনি আসলেই অনেক স্নেহ করেন আমাকে। লজ্জা পেলাম যে উনার slot
এ ক্লাস নিচ্ছি। সাথে সাথে উনাকে দুঃখপ্রকাশ করলাম। কিন্তু আমাকে আবারো লজ্জায় ফেলে উনি বললেন যে উনি এই ক্লাসরুমেই ক্লাস নিবেন। পাশের বাকি কয়েকটা ক্লাসরুম ই কিন্তু খালি ছিলো। খুব দ্রুত ক্লাসরুম খালি করে দিয়েছিলাম। সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম যে ক্লাসরুমের কাছে স্নেহ মলিন। এরপরে কোনদিন কারো ক্লাসটাইমে আর ক্লাস নেইনি। আমি কাউকে বলিনি, মনে হয়েছিলো আমারই তো দোষ। এখনো মনে পড়ে আমার ছাত্রছাত্রীরা আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। আমার মনে হয় ওরা অবাক হয়ে ভাবছিলো ‘ আহা, ভার্সিটিতে এগুলোও হয় নাকি?!!’
দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা হলো EMBA প্রোগ্রাম চালাতে গিয়ে। একটা অনুষদে শুক্রবারে বিজনেস অনুষদের EMBA প্রোগ্রামের ক্লাস হতো। ওই অনুষদের ডীন মহোদয়ের almost
instant নোটিশে আমাদেরকে ওখানে ক্লাস নেয়া বন্ধ করে দিতে হলো। বোঝার উপড়ে শাকের আটির মত করে তখন আবার চলছিলো mid
term exam. আরেক অনুষদের ডীন মহোদয়কে অনুরোধ করলাম। উনি এই আচমকা অনুরোধে অবাক হলেও ফিরিয়ে দেননি। এখানেও স্নেহ সম্পর্কিত ব্যাপারাটা ছিলো এবং এই ডীন মহোদয় আমাকে স্নেহ করেন বেশ। দুই স্নেহের অভিজ্ঞতায় বুঝলাম স্নেহের ও প্রকারভেদ আছে।
বাংলা বিভাগের লাউঞ্জ সংক্রান্ত বিষয়গুলো ব্যাপারটা মনে করিয়ে দিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ পড়তে আসেন আর কেউ পড়াতে আসেন। এরা কেউই infrastructure
নিয়ে আসেন না এবং এটা তাদের কাজও না। এটা যাদের কাজ তারা যদি সেটা করতে না পারেন তাহলে খোলা ফোরামে ব্যর্থতা স্বীকার করে অন্যদের কাজ করার সুযোগ দিতে পারেন। ক্লাসরুমগুলো কারো মালিকানায় থাকেনা, এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় থাকে। এগুলোতে সবার ই সমান অধিকার আছে এবং এই অধিকারটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রশাসনের। ল্যাব ব্যতীত কোন ক্লাসরুমই কোন বিভাগের থাকেনা সাধারনত পৃথিবীর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাবি প্রশাসনের উচিৎ একটা মাস্টার রুটিন করে সেই অনুযায়ী ক্লাসরুম বরাদ্ধ দেয়া। অনেকটা central
distribution এর মত। কারো কোন রুমের দরকার হলে সে central
distributor এর সাথে আলোচনা করবেন। এতে কোন শিক্ষক ১০টার ক্লাসে ১0.৪৫ এ আসবেন না। ক্লাসরুমের সংকটও হবেনা। ফেসবুকে এইসব characterization
ও হবেনা। কোন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের অশিক্ষকশুলভ পরামর্শও দিবেনা না যে ছাত্রছাত্রীরা গিয়ে শিক্ষককে ১.১৫ এর গাড়িতে চলে যান কেন তার জবাবদিহি চাইবেন।
একজন ডীন বা সভাপতির কাজ ক্লাসরুম টালি করা নয়। উনাদের যদি এইসব কাজ করতে হয় তাহলে শিক্ষা আর গবেষনা কোনদিন ই হবেনা। আমরা সেই upgradation
research ই করে যাবো অনন্তকাল ধরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পনা বিভাগটির কাজ কি?