অনেকে বলছিলো নয়টার বাস নেই ঢাকা থেকে আজকে
কারন ক্যাম্পাসে ঝামেলা চলছে। তারপরেও বাস এলো এবং বাসে উঠতেই একজন শিক্ষক বললেন যে, শুনলাম আজ ছাত্রদের বাচিয়েছেন। উনি এমন
ভাবে বলেছেন যে আমি একটু অবাক হলাম। উনার কথায় একটা হতাশা ছিলো। উনার
কথা হলো ছাত্ররা খুব খারাপ এবং এদের জন্য কিছু করার কোন মানে নেই। আমি দ্বিমত
পোষন করেছিলাম তখন। বলেছিলাম একজন দুজনের জন্য তো আর সবাইকে খারাপ বলা যাবেনা। আর আমার
বা আমাদের কাজতো এদের নিয়েই, মন্দ হলেও !! তো কি হয়েছিলো আজ?
আজ তিনটার বাসে ঢাকা যাচ্ছিলাম। গাবতলী
পার হবার পরে দেখলাম একটা বিআরটিসি বাস নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। এটাকে
তেমন পাত্তা দেয়ার দরকার মনে না করে নিজের কাজে মনোযোগ দিলাম। একটু
পরেই টের পেলাম এইটা জাবির বাস। আমার অভিজ্ঞতা হলো যেখানেই ছাত্র/ছাত্রী নিয়ে
ঝামেলা সেখানেই রাজনীতি থাকে। আমি
যেহেতু ছাত্র রাজনীতি একেবারেই পছন্দ করিনা আমি এইসব ঝামেলাগুলোকে সবসময়ই এড়িয়ে
চলি। এটাকেও
এড়াতে চাইলাম। পারলাম না। কারন একটু পরেই দেখলাম অনেকগুলো লোক বাসটিতে
হামলা করছে এবং এর মাঝে আছে আইআইটি এর পরিচালক।
এইবার ছাত্র শিক্ষক দুই সমাজ ই আক্রান্ত। নামলাম
বাধ্য হয়ে। নেমে বেশ কিছু ধাক্কাধাক্কি সামলিয়ে প্রায় ঘন্টাখানেকের চেষ্টায়
ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রনে আনতে পারলাম। পুলিশ খুব হেল্প করেছিলো। যতটুকু
বুজলাম দোষ আমাদের ছেলেদেরই। তারপরেও এরা ভার্সিটির ছেলেমেয়ে বলে কথা। খারাপ
কিছু তো আর বলা যাবেনা। অবাক হয়েছি একজন অশিক্ষিত মজুরের কথা শুনে
গাবতলীতে। যখন লোকজন বাসে হামলা করতে আসছিলো উনি বলছিলেন এই তোমরা থামো। আমরা
কি ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের মারবো নাকি? বুজলাম উনি এখনো ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের সামান্য
হলেও সন্মান করেন। ভাল লেগেছিলো কিনা এখনো বুজতে পারছিনা। কারন
আমি এখন চিন্তা করছি আমরা সন্মান পাবার যোগ্য কি না তা নিয়ে।
অনেক সিনিয়র শিক্ষকেরা বাসে বসে থাকলেও আমি
আর পাটোয়ারি ভাই আজকে একটা গনধোলাই খাবার ঝুকি নিয়ে ছেলেমেয়েদের বাচালাম। কিন্তু
ওরা কি করলো? ওরা রাস্তাটা আটকে রাখলো ৬ ঘন্টার ও বেশি সময় ধরে। আমাদের ৯টার বাস পুরো আশুলিয়া ঘুরে যখন সিএনবি
দিয়ে আরিচা সড়কে উঠলো নিজেকে একটা ধিক্কার দিতে হলো।
গাড়ির হেডলাইটে দেখলাম শ শ মানুষ হেটে যাচ্ছে। এদের
মধ্যে মেয়েরাও আছে। রাত বাজে ১১টা। এদের অনেকে হয়তো গারমেন্টস থেকে এসেছে। কেউবা
ঢাকা থেকে বাসের ছাদে চড়ে এই পর্যন্ত এসেছে। এদেরকে এখন আবার হাটতে হচ্ছে। এইটা
কোন ধরনের মানবিকতা? ভার্সিটিতে পড়ে যদি এরা এই শিখে তাহলে আমার কাছে গাবতলীর সেই অশিক্ষত
মানুষটি অনেক অনেক বেশি শিক্ষিত। এই হেটে চলা কোন মেয়ে বা ছেলে যদি কোন রাত্রিকালীন
ঝামেলায় পড়ে কে তার দায়িত্ব নিবে?
আজকের ঘটনাটা অনেক ঝুকিপূর্ণ কিন্তু ছোট ছিলো। তাই মনে
প্রশ্ন আসে। এটা কেন ম্যানেজ করা গেলোনা?
জাবিতে এর চেয়ে অনেক বড় ঘটনার জন্য ও কিন্তু এতক্ষন রাস্তা বন্ধ রাখা হয়নি। আজকে
এত রাতে বন্ধ রাখা হলো। ক্যাম্পাসটা নিয়ে কি আবারো খেলাদুলা শুরু
হয়ে গেলো নাকি?