বেশ কিছু পত্র পত্রিকায় খবর এসেছে যে লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা খালেদ মিশাল বাংলাদেশের গোলাম আযমের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ব্যক্তিগতভাবে জামাত নেতাদের ফোন করে। পত্রিকাগুলো খবরটি বেশ গুরুত্বের সাথে ছাপিয়েছে এবং গো আযমের নামের সাথে অধ্যাপক এবং আরও কিছু বিশেষণ যোগ করেছে। উনি অধ্যাপক ছিলেন কিনা সেটা আমি জানিনা এবং সেটা নিয়ে কথা বলছি না। কথা হলো পত্রিকাগুলো সাধারণত উনাকে এত সন্মান দেখায়না। কিন্তু মিশাল সাহেবের শোকবানী মনে হচ্ছে গো আযমের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার বেশ মজা ই লেগেছে পত্রিকাগুলো পড়তে। বলে রাখা ভাল যে উনাকে কেউ সন্মান দেখালে আমি তাতে কোন ক্ষতি আছে বলে মনে করিনা।
কাকতালীয়ভাবে এই সময়েই ভার্সিটিতে এক জর্ডানিয়ান ছেলের সাথে কথা হচ্ছিলো। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম। আমার দেশের আরও অনেকের মত আমারও ধারনা যে, আরবিতে কথা বলতে পারা মানুষগুলো অনেক উন্নত জাতের এবং অত্যন্ত ভাগ্যবান। নবীজীর ভাষায় কথা বলেন উনারা, সন্মান তো দিতে-ই হয়। তাই উনাদের সাথে কথা বলতে পারলে একটা তৃপ্তি আসে মনে হয়। হাস্যকর হলেও সত্যি ব্যাপার কিন্তু। তো ওর সাথে কথা বলার পর ওর মতামতগুলো নিয়ে ভাবলাম অনেক। ওর কথা হলো পৃথিবীতে কোন বর্ডার দরকার নাই। এক জাতি হিসেবে থাকবে সব মানুষ এবং সেটা হবে মুসলমান। যেমনটা ইসলামের প্রথম দিকে ছিলো। তার কথা অনুযায়ী খিলাফত-ই মোটামুটি আসল উদ্দেশ্য। এবং যারা এটা মানেনা তারা আসলে মুসলমান না। সে এখানে প্রকৃত মুসলমান বুজিয়েছে হয়ত।
তার এই সংজ্ঞা অনুযায়ী আমরা মানে বাংলাদেশীরা প্রকৃত মুসলমান না। এইটা কিন্তু সে প্রকাশ্যে বলেনি, পরোক্ষভাবে আমাকে বুজাতে পেরেছে। তার এইরকম ধারনার কারন কি? কারন হলো আমরা মুসলমান হয়েও আরেক মুসলমান ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এই যুদ্ধটা আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করেছিলাম ১৯৭১ সালে এবং তার ধারনা আমরা কাফেরদের (একখানে ভারতীয় হিন্দুদের বোঝানো হচ্ছে) সঙ্গ দিয়েছি তখন মুসলমানদের ছেড়ে দিয়ে। আমি বেশ আগ্রহ নিয়েই ওর কথা শুনছিলাম। আমার যুক্তি দিচ্ছিলাম। ও কতটা সেই যুক্তি মানবে এইটা প্রশ্নসাপেক্ষ এবং এদেশে কেউ কারো যুক্তি মানবেই এমন কোন বাধ্যবাধকতা নাই।
আমার মজা লাগছিলো আমাদের সবেধন নীলমণি একখানা যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন অনুভূতি দেখে। বাংলাদেশে আমারা মারামারি করি শেখ মুজিবুর রহমান না জিয়াউর রহমান যুদ্ধে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তা নিয়ে। ভারত মনে ওরাই আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আমরা কিছুই করিনি। পাকিস্তানিরা মনে করে আমরা বিশ্বাসঘাতক। আর আরবিদের কথা তো বললাম ই। আজকে আরবিদের নিয়েই কথা বলছি।
আরবিরা নবীজীর বংশধর হলেও শিক্ষাদীক্ষায় অনেক পিছিয়ে। ওরা নবীজীকে অনসরন করতে পারেনি, নবীজী বলেছিলেন জ্ঞানার্জনের জন্য চীন যেতে হলেও যেন মানুষ যায়। ওদের শিক্ষাব্যবস্থা চলে ধারে উধারে। তবে গত কয়েক বছর ধরে ওরা এই খাতে অনেক বিনিয়োগ করছে এবং বেশ সফলও বটে। তো ওরা আমাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানলো কি করে? অনেক উপায় থাকতে পারে। তবে একটা অন্যতম উপায় হচ্ছে আমাদের দেশীয় এবং পাকিস্তানি কিছু তথাকথিত আলেম উলামা। উনারা আরব দেশগুলোতে গিয়ে উনাদের স্বল্প জানা আরবিতে লম্বা লম্বা টান দিয়ে আরব দেশীয়দের বুজিয়েছেন যে আমাদের যুদ্ধটা জায়েজ ছিলোনা। আরবীয়রাও দেখলো এই লোকগুলা আরবিতে কথা বলে, সুতরাং মিথ্যা বলার তো প্রশ্ন-ই উঠেনা। এবং উনারা তখন থেকে আমাদের কাফের বানিয়ে ফেললেন। ওইসব ঘটনার জের হলো আজকে খালেদ মিশালরা গো আযমের জন্য মায়াকান্না কাঁদে।
কিন্তু খালেদ মিশালরা কোনদিন খোজ নিয়ে দেখেনি যে যেই লোকটা হাজার হাজার মা বোনের ইজ্জত নিলামে তুলেছিল সে মুসলমান হয় কি করে? এইটা ইসলাম ধর্মের কোন যায়গায় জায়েজ করা আছে? নবীজী তো ইহুদীদের সাথে তিন তিন বার চুক্তি করেছিলেন, তাইলে এইসব গো আযমদের কি করে সাহস হয় অন্য ধর্মীদের উপড়ে অত্যাচার করার যদি উনারা সত্যিকারের মুসলমান হতেন। ভারতে মোদী যেমন করে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চান, আমরা মুসলমানরাও যদি অন্যদের নিয়ে তেমন করে ভাবী, তাহলে পার্থক্যটা কোথায়? আমি খুবই বিস্মিত হয়েছি আরবীয়দের এইরকম ইসলাম দেখে। খালেদ মিশাল ফোনে সমবেদনা জানান, ইরানের রাষ্ট্রদূত বাসায় যান, কাতারের উচ্চ অফিসিয়াল জানাজায় অংশ নিতে চান - সবই যেন একসূত্রে গাথা। এইসব আরবিরা কোনদিন খবর নেয়নি যে ওদের দেয়া অর্থ সাহায্য দিয়ে আমাদের দেশগুলাতে কি করা হচ্ছে। আবার যখন ওদের টাকা অন্যায়ভাবে খরচ হয় এবং দেশের সরকার সেটার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়, তখন এদের গা জ্বালা শুরু হয় এবং এরা সরকারকে হুমকি ধামকি দেয়া শুরু করে।
খালেদ মিশালদের চেয়ে আমাদের দেশের মানুষজনও কম অজানায় থাকেন না। আমাদের দেশের মানুষজন যদি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতেন তাহলে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেত। মাঝে মাঝে এরশাদের মত লোককেও দেখি ইসলাম ধর্ম রক্ষায় মাঠে নামার ঘোষণা দিতে। তখন আমি ভাবী যে ইসলাম ধর্মের আসলেই কি এমন দুর্দিন যাচ্ছে? তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, ইসলাম ধর্ম আসলেই শঙ্কার মধ্যে আছে। নতুন নতুন যারা মুসলমান হচ্ছেন তারা যে কোন ধরনের ইসলাম মেনে নিয়ে মুসলমান হচ্ছেন এইটা নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে আজকাল। যখনি কোন সন্ত্রাসী ধরা পড়ে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে তখনি দেখা যায় যে সে কিছুদিন আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। কানাডার পার্লামেন্টে হামলা, আমেরিকার গত কয়েকমাসের বেশ কিছু হামলার চিত্র একই।
আমি যতটা বুজতে পারি, ইসলাম ধর্ম রক্ষার জন্য যুদ্ধ করতে হবেনা, হাজারো নিরপরাধ মানুষকে মারতে হবেনা, রাজনীতির মত ভণ্ডামি করতে হবেনা, কারো হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে আজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিতে হবেনা। আল্লাহ নিজেই ইসলাম ধর্মকে রক্ষা করবেন। আমাদের শুধু প্রকৃত ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করলেই হবে।